গর্ভের শিশুর পর চলে গেলেন মাও
ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সূর্য বেগম আমেনা। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বামী জাকির হোসেন। অসুস্থ স্বামীর সেবাযত্নের জন্য সব সময় পাশে থাকতেন। আজ শনিবার সকালে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিলেন রক্ত পরীক্ষা করতে। কিন্তু হাসপাতালের সামনে একটি বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় সব তছনছ হয়ে গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স অন্তঃসত্ত্বা সূর্য বেগম, তাঁর শিশু ছেলে সজীবসহ আরো বেশ কয়েকজনকে চাপা দেয়। দুপুরে সূর্য বেগমের গর্ভের সন্তান মারা যায়। এরপর তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যান সূর্য বেগম।
এর আগে অ্যাম্বুলেন্সচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সাত বছর বয়সী শিশু সাকিব ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি (৬০)। আহত হন সাকিবের মা গুলেনুর বেগম, সূর্য বেগমসহ পাঁচজন। দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলেনুর বেগম মারা যান। অসুস্থ সাকিবের চিকিৎসার জন্য বাবা ফেরদৌস মিয়া সপরিবারে হাসপাতালে এসেছিলেন। ফেরদৌস মিয়া ও তাঁর অন্য ছেলে বেঁচে গেলেও চিরতরে চলে গেছেন গুলেনুর ও সাকিব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. জেসমিন নাহার সূর্য বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ সকালে অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় সূর্য বেগম আহত হন। তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দুপুরে তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। পেট থেকে তাঁর মৃত সন্তান বের করা হয়। এরপর সূর্য বেগমকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
চিকিৎসক জেসমিন নাহার বলেন, দুর্ঘটনায় সূর্য বেগমের সাত বছরের শিশু সজীব আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। শিশুটির পা ভেঙে গেছে।
সূর্য বেগম ও তাঁর স্বামী জাকির হোসেনের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাগানমাঠ গ্রাম।
হাসপাতালে জাকির কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি বাঁচতাম না ভাই। আমার কইলজাডা খালি জ্বলে। কইলজাডার ভেতরে খালি জ্বলে আর জ্বলে।’
জাকিরের ভাই আবদুল হাকিম জানান, জাকির দুই মাস আগে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলে তাঁর চিকিৎসা চলছে। স্বামীর সেবা করার জন্য সন্তান নিয়ে স্বামীর পাশে থাকতেন সূর্য বেগম।