চোখের চিকিৎসা করাতে এসে পেলেন স্ত্রী-ছেলের লাশ
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা ছোটলাখালী গ্রামে থাকেন ফেরদৌস মিয়া। চোখের চিকিৎসা করাতে শিশু ছেলে সাকিবকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী গুলেনুর বেগম ও নয় মাস বয়সী দুধের শিশু সন্তান আকাশ। ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি যাচ্ছেন না ফেরদৌস বরং নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে আর স্ত্রীর লাশ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বসে কেবল কাঁদছিলেন ফেরদৌস মিয়া। তাঁর সঙ্গে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন অন্য স্বজনরাও।
আজ শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি অ্যাম্বুলেন্স হঠাৎ করেই একাধিক মানুষকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই সাত বছর বয়সী শিশু সাকিব ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি (৬০) নিহত হন। আহত হন সাকিবের মা গুলেনুর বেগম (৩০), অন্তঃসত্ত্বা সূর্য বেগমসহ পাঁচজন। দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলেনুর বেগম মারা যান।
আজ বারবার অচেতন হয়ে পড়ছিলেন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘আমার এই সন্তানের এখন কী হবে। আমার সন্তান এখন বুকের দুধ কই পাবে?। আমি তো শেষ হয়ে গেলাম। আমার স্ত্রী ও সন্তানরা আমার সবকিছু। হে আল্লাহ এত কষ্ট আমাকে কেন দিলা! আমার এই দুধের শিশুটাকে মা-হারা করে দিলা!’
গ্রামের বাড়িতে খেলতে গিয়ে শিশু সাকিব চোখে আঘাত পায়। তার চিকিৎসা করাতে বাবা ও মা দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় তাঁদের এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন।
সাকিবের চাচা বাদল মিয়া বলেন, ‘চিকিৎসা করাতে এসে এভাবে মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না।’
নিহত গুলেনূরের ভাতিজা আল আমিন বলেন, ‘এমন একটা দুর্ঘটনা। যার জন্য একটা পরিবার শেষ।’ অ্যাম্বুলেন্সটিই হয়ে গেল পরিবারটির দীর্ঘশ্বাস। গুলেনূরের ভাসুর রিয়াজ খলিফা বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স তো মানুষের জীবন বাঁচায়। আজ ওই অ্যাম্বুলেন্সই মানুষের জীবন নিয়ে গেল।’