চাপা দিয়ে হত্যার পর এখন অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘট!
দিনভর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য দুর্ভোগে পড়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা। আজ রোববার সারাদিন অপেক্ষা করেও একটি অ্যাম্বুলেন্স পাননি রোগীরা। অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের একটি সংগঠনের দাবি, তারা ধর্মঘট পালন করছে।
গতকাল শনিবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় চারজন নিহত ও তিনজন আহত হয়। এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক সোহেলকে আটক করা হয়।
রোববার সকাল থেকেই রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু সারাদিনেও তারা কোনো অ্যাম্বুলেন্সের দেখা পায়নি। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ছোট গাড়িতে করে হাসপাতাল থেকে বের হতে হয়েছে রোগীদের।
টঙ্গী থেকে মামুন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের পরামর্শে সিটিস্ক্যান করাতে হাসপাতালের বাইরে যেতে চাচ্ছিলেন তিনি। অথচ কোনো অ্যাম্বুলেন্সই পাননি।
মামুনের আত্মীয় মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দুইদিন আগে তো অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ওয়ার্ডেই থাকতেন। ওয়ার্ডেই ভাড়া করা যেত অ্যাম্বুলেন্স। অথচ আজ জরুরি বিভাগের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।’ পরে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট কার ভাড়া করেন মোশাররফ।
অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নোয়াখালীর সোলায়মান। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। আজই ছাড়পত্র পেয়েছেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া হাসপাতাল ছাড়তে পারছিলেন না। তিনি জানান, হাসপাতালে একটাও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোগীরা এসব অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গিয়েও পড়েছে ভোগান্তিতে। কোনো অ্যাম্বুলেন্সই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী নিয়ে বাইরে যেতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘট চলছে। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
কী কারণে ধর্মঘট জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সংগঠনের এক নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানান, রোববার সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাগান গেট সংলগ্ন পার্কিংয়ের জায়গায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স রাখতে দিচ্ছে না পুলিশ। অ্যাম্বুলেন্স রাখলেই র্যাকার লাগিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এরই প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ওই নেতা আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স আছে। যার বেশির ভাগের মালিক হাসপাতালের কর্মচারী ও তাদের স্বজনরা। তিনি আরো বলেন, ‘শনিবারের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এ ঘটনার দায়ভার ওই অ্যাম্বুলেন্সের মালিকের। যারা আগে গাড়ি ধোয়া-মোছা করত তাদের দিয়ে গাড়ি চালালে পরিণতি এমনই হবে। মালিকরা এমন করেন, কারণ লাইসেন্সধারীদের ভালো অঙ্কের বেতন দিতে হয়। আর চালকের সহকারীদের দিয়ে গাড়ি চালালে ২০ শতাংশ দিলেই হয়। এদের জন্য আমরা ভুক্তভোগী। গাড়ির চাকা চললে আমাদের আয় হয়। এর দায়ভার ওই মালিককেই নিতে হবে।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপপরিচালক খাজা আবদুল গফুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক পরিচালনা কমিটি ধর্মঘট ডেকেছে তা আমার জানা নেই। যদি ডাকে তা হাসপাতালের ব্যাপার না। যদি আমার রোগীকে এ ব্যাপারে বাধা দেওয়া হয়, তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’