বার কাউন্সিল নির্বাচন পিছিয়ে ২৭ মে
আইনজীবীদের সনদসহ পেশাগত বিষয়ের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে আগামী ২৭ মে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
বার কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন সাংবাদিকদের জানান। ২০ মে এ নির্বাচনের জন্য দিন ধার্য ছিল।
বার কাউন্সিলের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বার কাউন্সিলের বর্তমান সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরসহ পাঁচজন নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আবেদন জানান। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে বার কাউন্সিল জরুরি সভায় মিলিত হয়। সভায় নির্বাচন সাতদিন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ নির্বাচিত ১৩ সদস্য সভায় অংশ নেন। ভোটার তালিকায় থাকা কিছু ত্রুটি হালনাগাদ করার জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়।
নির্বাচনে মোট ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন আইনজীবী তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে গত ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। যাতে কোনো কোনো আইনজীবীর একাধিক আইনজীবী সমিতির ভোটার থাকার বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। ফলে এ ভোটার তালিকা সংশোধনে আইনজীবীদের মধ্য থেকেও দাবি ও আবেদন জানানো হয়।
এরই মধ্যে নির্বাচনে প্যানেলভিত্তিক সমর্থিত প্রার্থীরা এবং একক প্রার্থীরাও দেশব্যাপী সকল আইনজীবী সমিতিতে সফর করে জমজমাট প্রচারণা চালাচ্ছেন। আগামী ২৭ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র, দেশের জেলা সদরের সকল দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভোটকেন্দ্র এবং বাজিতপুরসহ দেশের ১২ উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি আদালত অঙ্গনের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে ১৪টি সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে ৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৪ জন সদস্যের মধ্যে সারা দেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাতজন নির্বাচিত হবেন। সাধারণ আসনে সাতজন সদস্যের বিপরীতে ৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সাতটি সদস্য পদে মোট ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাতটি অঞ্চল হলো গ্রুপ-এ সাবেক বৃহত্তর ঢাকা জেলার সকল আইনজীবী সমিতি, এখানে চারজন প্রার্থী; গ্রুপ বি বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি-এখানে তিনজন প্রার্থী; গ্রুপ সি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি-এখানে তিনজন প্রার্থী; গ্রুপ ডি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি এখানে পাঁচজন প্রার্থী; গ্রুপ এফ বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি এখানে তিনজন প্রার্থী; গ্রুপ এইচ বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি-এখানে চারজন প্রার্থী এবং গ্রুপ জি বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি-এখানে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকারবলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর বাকি ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
সাধারণ আসনে সাতজন সদস্যের পদে আওয়ামী লীগ ও সমমনা আইনজীবী সংগঠন সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি ও তাদের সমমনা আইনজীবীদের সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলসহ মোট চারটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া আরো প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধারণ আসনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন সিনিয়র আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট পরিমল চন্দ্র গুহ (পি সি গুহ), অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। সাধারণ আসনে সাতটি সদস্য পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জামিল মোহাম্মদ আলী (এ জে মোহাম্মদ আলী), সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট বোরহানউদ্দিন ও অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া।