প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর দ্বিমত
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেওয়া বাণীকে স্ববিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমি তাঁর (প্রধান বিচারপতি) এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
বিচার বিভাগ পৃথককরণের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সোমবার বাণী দেন প্রধান বিচারপতি। এতে তিনি বলেন, বিচার বিভাগে দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্য পদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকার্যে বিঘ্ন ঘটে। বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়। তাই ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন করা এখন সময়ের দাবি।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর আপিল বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের ওপর এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখিত প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন হওয়া সময়ের দাবি। ওই বিধানটি পুনঃপ্রবর্তন করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো সমুন্নত ও সংহত হবে এবং বিচার বিভাগের সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’
প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ আইনমন্ত্রী বলেন, ৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী বিচারকদের পদায়ন, পদোন্নতি, অপসারণসহ এসব ক্ষমতা রাষ্ট্রের প্রধান বা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকবে। তবে ১৯৭৮ সালে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এসব পদায়ন, পদোন্নতি সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পরে অবশ্য এই সংশোধনী বাতিল করা হয়। প্রধান বিচারপতি এসব ক্ষমতা আবারও সুপ্রিম কোর্টের অধীনে নিতে চাইছেন। যেহেতু তিনি ৭২ সংবিধানের পুনঃপ্রবর্তন চাইছেন, তাহলে সেখানে আবার এসব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা কীভাবে সম্ভব?
মন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো বিচারকের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে, এমন নজির নেই। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন, এর উদাহরণ হিসেবে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জামিনের বিষয়টি উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে বলেই মাহমুদুর রহমান জামিন পেয়েছেন।
তবে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ১১৬ অনুচ্ছেদও সংশোধন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
প্রধান বিচারপতির হঠাৎ করে এখন এ কথা বলার পেছনে কোনো কারণ আছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি যে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং তাঁর এই বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। বিচারকরা কাজ করতে গিয়ে হয়তো মনে করছেন, এ জন্য তিনি এ কথাগুলো তুলে ধরেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দুলাল এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।