নাসিরনগর গিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইল বিএনপি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় হামলার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর পরিদর্শন করেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। তারা হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এর আগে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও একই দাবি জানিয়েছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ শুক্রবার দুপুরে নাসিরনগরে গত ৩০ অক্টোবর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান বিএনপি নেতারা।
পরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে নাসিরনগরের মন্দির এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করার জন্য এসেছি। কোনো রাজনীতি করতে আসিনি। আমরা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত এবং দুঃখিত যে দেশে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। ঘটনার কারণ যাই হোক প্রকৃত যারা দোষী তাদের শাস্তি কামনা করি। এই ঘটনার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করি।’
প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুনীল বড়ুয়া, সঞ্জীব চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। এই সময় সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার ভূইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকনসহ জেলা, উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মল্লিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
গত ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার) নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামের এক যুবক পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরদিন রোববার উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের কয়েকটি মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কাজল দত্ত ও নির্মল দত্ত বাদী হয়ে গত সোমবার নাসিরনগর থানায় দুটি মামলা করেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। চারদিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ দিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই নাসিরনগর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার দুটি ঘর ও দক্ষিণপাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে দুটি পাড়ার গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।