মেয়রকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে
দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ নির্বাচনে মেয়র পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না বলে জানিয়েছে ইসি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের জন্য ইসির জারি করা এক বিশেষ পরিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সম্প্রতি ইসির জারি করা ওই বিশেষ পরিপত্রে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বিধায় সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি হাইকোর্টে লাভজনক পদ সাব্যস্ত হয়েছে। কাজেই স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৯-এর উপধারা (২) (ঙ) অনুযায়ী মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে উক্ত ব্যক্তি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলে তাকে উক্ত পদ হতে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে।’ আরো বলা হয়েছে, কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত নন বিধায় তাঁদের পদত্যাগ না করে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোনো বাধা থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, এটা আইনেই বলা আছে যে সিটি করপোরেশনের পদে বহাল থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচন করতে পারবেন না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে তাঁকে অবশ্য পদত্যাগ করতে হবে।
কত দিন আগে পদত্যাগ করতে হবে জানতে চাইলে উপসচিব বলেন, এর জন্য কোনো সময়সীমা দেওয়া নেই। যেকোনো সময় পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সংসদ সদস্যদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা ভোটেও একইভাবে প্রচারে মানা রয়েছে সাংসদদের।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নির্বাচনী প্রচারণা ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে তাঁরা অংশ নিতে পারবেন না। তবে ভোটার হলে শুধু কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি মেয়ররাও প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। এ-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে দলীয় ভিত্তিতে সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি জারি হয়েছে। যা যথাযথ প্রতিপালনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।’
গত সোমবার তফসিল ঘোষণার দিন এ নির্বাচনের নতুন আচরণবিধি জারি করে ইসি সচিবালয়। সেখানে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ প্রচারকাজে সরকারি সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো, রেস্টহাউস বা সরকারি কার্যালয় ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে অবস্থানও করতে পারবেন না।
আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমাদানকালে পাঁচজনের বেশি লোক নেওয়া যাবে না; প্রচারে জীবন্ত প্রাণীর ছবি ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতীক পেয়েই প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।
দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থিতাও রয়েছে। তবে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয়।
দলপ্রতি সিটি করপোরেশনে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। বিধি লঙ্ঘনে দলকে ৫০ হাজার টাকার জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে।
চার লাখ ৭৯ হাজারের বেশি ভোটার থাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ১৫ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। এর সঙ্গে আরো ৭৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর পদে ভোটার অনুপাতে এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা।
গত সোমবার ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই সিটিতে মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৪ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ ডিসেম্বর ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৫ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২২ ডিসেম্বর।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও নয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। এখানে মোট ভোটার চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ এবং নারী দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮।
বর্তমান কমিশন দায়িত্বে আসার পর ২০১৩ সালের ১৫ জুন একসঙ্গে রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা এ চার সিটি এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম এ তিন সিটিতে একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।