নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত তৈমূর, করছেন জেতার আশা
দল মনোনয়ন দিলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে প্রস্তুত আছেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি জানিয়েছেন, যদিও শুক্রবার পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে আসতে রাজি ছিলেন না।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির এই নেতা।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন। মনোনয়নের ব্যাপারে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি মনে করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির অবস্থা এখন অনেক ভালো। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন।
গত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি নির্বাচনীমুখী দল। বিএনপি সব সময় নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে আমরা জিতব।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, খালেদা জিয়া নির্ধারণ করবেন কে নির্বাচন করবে। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। অবশ্য নেত্রী আমাকে বলেছেন, যেহেতু তোমার গতবারের অভিজ্ঞতা আছে, তুমিই পারবে। এ বিষয়ে দলের সবার সমর্থন আছে বলে তৈমূর দাবি করেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’ তিনি নির্বাচনের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা মাঠে থেকে যে নির্বাচন করি সেখানে কোনো নির্বাচন হয় না। যে নির্বাচন হয় সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই। বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন আছে এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আমার বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনের কিছু চেষ্টা থাকে। কিন্তু এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য তারা বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না।’
তৈমূর বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কোনো বিষয় মনে করি না। আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। কেন্দ্র দখল করে যদি পিটাপিটি করে জয়ী হতে হয় সেখানে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু সব কিছু দখল হয়ে যায় ভেতরে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে বিএনপির আরো দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল আজ শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা বসেছিলেন আমরা যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তাদের নিয়ে। এর মধ্যে আমি এবং অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছি যে আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। শেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়া আমাদের আরো আলোচনার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো পর্যালোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। দুই একদিনের মধ্যেই কে দলের মনোনয়ন পাবেন তা জানা যাবে।’
এ টি এম কামাল আশা করেন, তিনি মনোনয়ন পাবেন। তাঁদের মধ্যে কোনো গ্রুপি নেই বলেও তিনি দাবি করেন। বলেন, ‘নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমরা তাঁর নির্বাচন করব।’
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে কোনো গ্রুপি নেই। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তাঁর নির্বাচন করব। এ নির্বাচনকে আমরা অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে এবং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এই সরকার সঠিক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে কি না, তা দেখার জন্য এই নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২২ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৪ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই ও বাছাই করা হবে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ৪ ডিসেম্বর।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল এ তিনটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আইভী বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।