ফেরার সুযোগ নেই, এটা মর্যাদার লড়াই : সাখাওয়াত
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর ঠিক কয়েকঘণ্টা আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও এবার পরিবেশ-পরিস্থিতি ভিন্ন বিধায় ভোট থেকে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন দলটির মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব অডিটরিয়ামে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে দলীয় নেতাদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন বিএনপির প্রার্থী।
‘এবার মধ্যরাতে নির্বাচন থেকে সরে আসবেন কি না’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘এবার এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এ বছর দল-সমর্থিত নয়, পুরোপুরি দলের প্রার্থী। এটা ধানের শীষ আর নৌকার মর্যাদার লড়াই। এই মর্যাদার লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ নিয়ে মাঠে থাকব।’
এ সময় সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারও ছিলেন, যিনি গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ভোটে নেমেছিলেন। কেন সে সময় বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিল আজ তারও ব্যাখ্যা দেন সাখাওয়াত হোসেন খান।
‘গত নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের তাগিদে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের ও অন্যান্য প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনও সরকারের কাছে সেনাবাহিনী চেয়েছিল। কিন্তু সরকার নির্বাচন কমিশনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। সেই কারণেই দল সেদিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল।’
এখনো নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে দাবি করেন বিএনপির এ প্রার্থীর। তিনি বলেন, নির্বাচনে এখনো প্লেয়িং লেবেল ফিল্ড তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এখানে বৈধ অস্ত্র জমা নিতে হবে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। বৈধ অস্ত্র দিয়েও প্রভাবশালীরা নির্বাচনে মানুষকে প্রভাবিত করে, ভয়-ভীতি দেখায়।
এ সময় প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের বদলির আবেদনের পাশাপাশি সরকারি দলের মতোই সুযোগ-সুবিধা দেওয়ারও দাবি জানান সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় যেসব দলবাজ কর্মকর্তা রয়েছে তাদের বদলে নিরপেক্ষ প্রশাসন নিয়োগ দিতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতির মধ্যে রাখা হয়েছে। বিরোধী দল হিসেবে আমাদের হাত-পা যেন বেঁধে দেওয়া না হয়।
সাখাওয়াত হোসেন খান আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ গত ১৩ বছর দেখেছে। এখন তারা পরিবর্তন চায়। যদি মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে তাহলে অবশ্যই বিএনপি এখানে জয়লাভ করবে। এখান থেকেই শুরু হবে হারানো গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের লড়াই।
এ দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ ছাড়া আরো কয়েকটি দল মেয়র পদে ভোটে লড়বে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এখানে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল আজ ২৪ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই ও বাছাই করা হবে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ৪ ডিসেম্বর। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় নির্বাচন।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল এ তিনটি পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী যিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আইভি বিলুপ্ত হওয়া নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
এখানে একজন মেয়রের সঙ্গে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। মোট ভোটার চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন। এবার ভোটার বেড়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৬৩টি এবং ভোটকক্ষ এক হাজার ২১৭টি।