উদ্বেগে বাংলাদেশের ভোক্তারা, জানে না বিএসটিআই
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এই সময়ে মানুষ ক্রমাগত ঝুঁকছেন ঝটপট তৈরি করা যায় এমন সব খাবারের দিকে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট নুডলস। দেশের বাজারে এখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইনস্ট্যান্ট নুডলস পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই খাওয়ার জন্য তৈরি করে ফেলা যায়।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেসলে’র ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুডলস। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুডলসে অতিরিক্ত মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে। বেশ কয়েক দফা পরীক্ষার পর দেশটির বাজার থেকে ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুডলস প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
নিকটতম প্রতিবেশী দেশের তৈরি ম্যাগি নুডলসে উচ্চমাত্রার সিসা ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মনোসোডিয়াম গ্লুকোমেট পাওয়ায় বাংলাদেশে এর ভোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভোক্তাদের অনেকেই আপাতত এই ব্র্যান্ডের নুডলস না খাওয়ার বা না কেনার কথা জানিয়েছেন।
ম্যাগি নুডলসের ভোক্তা মনিরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ভারতের নুডলসে ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়ার কথা শোনার পর থেকে আর সেটি কিনছেন না তিনি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জাকারিয়া বলেন, যেগুলো বাড়িতে কিনে রাখা আছে, সেগুলোও না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তবে ম্যাগি নুডলসে ক্ষতিকর উপাদান থাকার পুরোপুরি অন্ধকারে বাংলাদেশের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মহাপরিচালক ইকরামুল হক আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কিছু জানতেন না। বাংলাদেশেও ম্যাগিতে সিসা, এমএসজি পাওয়া যেতে পারে কি না, জানতে ইকরামুল হকের সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভারতে ম্যাগিতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার কথা জানতে পারেন।
ইকরামুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভারতে যদি পাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশেও তো পাওয়া সম্ভব। এখনই জরুরি ভিত্তিতে বাজার থেকে ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুডলসের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা হবে। এরকম কিছু পাওয়া গেলে তা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
বিষয়টি নজরে আনার জন্য এনটিভি অনলাইনকে ধন্যবাদ দেন বিএসটিআই মহাপরিচালক।
মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ সিসা ও মনোসোডিয়াম গ্লুকোমেট (এমএসজি) গ্রহণ করলে মানুষের কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে তা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আলেয়া মাওলা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিসা তো শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। অতিরিক্ত পরিমাণে সিসা শরীরে প্রবেশ করলে তা মানুষকে পঙ্গু করে দিতে পারে। কোনো গর্ভবতী নারী অতিরিক্ত সীসাসমৃদ্ধ খাবার খেলে তিনি বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিতে পারেন।’
আজকাল অনেক মা শিশুদের ম্যাগি নুডলস সিদ্ধ করে খাওয়ান, এ প্রসঙ্গে আলেয়া মাওলা বলেন, সিসা ও এমএসজি শিশুর পাকস্থলীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার।
ম্যাগি নুডলস পরীক্ষা করা বা এতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেলে খাদ্য মন্ত্রণালয় বা খাদ্য অধিদপ্তর কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা জানতে বারবার সেখানে ফোন করা হলেও দায়িত্বশীল কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজ বিকেল পৌনে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বারবার ফোন করেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফেকা ইকফাত ও তথ্য কর্মকর্তা সুমন মেহেদীকে পাওয়া যায়নি। সবশেষ ৫টায় সচিবকে সপ্তমবারের মতো ফোন করা হলে সেটি কেটে দেন তিনি। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদকে কয়েকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
একইভাবে নেসলে বাংলাদেশে বারবার ফোন করেও দায়িত্বশীল কারো সঙ্গে কথা বলা যায়নি। নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট ম্যানেজার ফারাহ শারমিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে প্রথমে জানানো হয় তিনি মিটিংয়ে। পরে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিনবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি তাঁকে।