জেলা প্রশাসককে অপসারণের দাবিতে আ.লীগের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফকে অপসারণের দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে জেলা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির আয়োজন করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এ সময় জেলা প্রশাসককে অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের মেঘশিমুল এলাকায় প্রস্তাবিত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) প্রকল্পে ৩১ দশমিক ৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইডিসিএলের পুরাতন প্লান্ট মানিকগঞ্জে সরিয়ে নিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তবে প্রস্তাবিত জমির শ্রেণি নাল হলেও সাম্প্রতিককালে বালু ভরাট করে ভিটি শ্রেণি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোনো মৌজার রেট (দর) পরিবর্তন না করলেও শুধু মেঘশিমুল মৌজার ভিটি শ্রেণির সরকারি মূল্য প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। কারণ, আশপাশের মৌজার সমশ্রেণির জমির দর অনেক কম।’ প্রস্তাবিত এই দরে জমি অধিগ্রহণ করলে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন ওই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানায়। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৩ মে) একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মন্ত্রীর পরিবারের পকেটে ঢুকবে শত কোটি টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে লেখা হয়, প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে কেনার ব্যবস্থা করেন। এ কাজে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করা হয়। দাম বাড়াতে নাল শ্রেণির জমি মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়। আর সরকারের বাড়তি এই টাকা মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনদের পকেটে ঢুকবে। তবে সরকারি অর্থ লোপাটের আশঙ্কায় ওই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসন আপত্তি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠালে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেমে যায়।
এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অনুসারি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ রফিক সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেন।
এতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও পৌর মেয়র মো. রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী ওরফে সুমনসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগনেতা সুলতানুল আজম খান বলেন, জেলার আধুনিক উন্নয়নের রূপকার হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। হাজার হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি। ইডিসিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। তবে এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অবিলম্বে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।