মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেলেন সাংবাদিক মিজান
ডাকাতির মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন সাংবাদিক মিজান রহমান ও তাঁর ১৫ স্বজন। গত মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক উজ্জ্বল মাহমুদ এই রায় দেন। জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে হয়রানির উদ্দেশে মামলাটি করেছিল প্রতিপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক মিজান রহমানের আইনজীবী আহসান আলী ও অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের ডোখলপাড়ার মুনসুর রহমানের স্ত্রী সায়েরা বানু মামলাটি করেন। সেখানে বলা হয়, সায়েরা বানুর বাড়ি থেকে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে জোর করে চার লাখ ৯ হাজার টাকা লুট করেন মিজানসহ ১৬ জন।
খালাস পেয়ে মিজান বলেন, ‘মামলার এজাহারে বর্ণনা করা ঘটনার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল ছিল না। মামলার এজাহারে বাদীর বাড়ি থেকে জোর করে চার লাখ ৯ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ আনা হয়। অথচ মামলায় বর্ণনা করা ঘটনার সময় অর্থাৎ, ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় আমি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এনটিভি কার্যালয়ে ডিউটিরত ছিলাম, যা আমার কর্মক্ষেত্রের হাজিরা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে সংরক্ষিত ছিল। ওই উপস্থিতির সময়সূচি অনুযায়ী আমি ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় থেকে পরদিন শুক্রবার সকাল ৮টা ৫৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অফিসেই ছিলাম। ফলে মামলার মিথ্যা তথ্য বেড়িয়ে আসে।’
সাংবাদিক মিজান জানান, অফিস হাজিরার নথিপত্রসহ এনটিভিতে কর্মরত বার্তা সম্পাদকের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ ও বাদী পক্ষের ছয় সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। পরে যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করা হয়। রায়ের দিন বিচারক পুরো বিচারিক কার্যক্রম ও সাক্ষীদের জেরা সব আসামি ও বাদীর সামনে উপস্থাপন করেন। পরে আসামিদের প্রায় ঘণ্টাব্যাপী জেরা করেন বিচারক নিজে। আদালতে দাখিল করা বিভিন্ন নথিপত্র ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা করে মামলাটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে সব আসামিদের খালাস দিয়ে রায় দেন।
বেকসুর খালাস পেয়ে সাংবাদিক মিজান রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে আমার পরিবারকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়। আজও তা অব্যাহত আছে। কিন্তু, মিথ্যার পরাজয় হবেই। আর সেজন্য আমরা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর মামলার বাদীর স্বামী মুনসুর ও ছেলে রুবেল হোসেনসহ ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী মিজান রহমানের বসতবাড়ি ও জমি দখল করতে যায়। সেদিন তারা জোর করে শতাধিক বাঁশ কেটে ফেলে এবং বাড়ির নারীদের মারধর করে। দুই দফা গ্রাম্য সালিস করেও হামলা ও নির্যাতনের বিচার না পেলে এই ঘটনায় মিজানের ছোট ভাই আহসান হাবীব বাগমারা থানায় ২৪ ডিসেম্বর একটি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-২৩। ২৪ ডিসেম্বর দিনগত রাতে গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত রুবেল, মুনসুর, আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু ও আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় বাগমারা থানা পুলিশ। পরে পাল্টা মামলা হিসেবে মিজানকে প্রধান আসামি করে মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের লোকজন।
মিজান রহমান জানান, মামলার বাদী সায়েরা বানুর স্বামী মুনসুর রহমান আমার ছোট ভাইয়ের করা জমিজমা সংক্রান্ত অপর এক প্রতারণার মামলায় ছয় মাসের জেল ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার দণ্ড পেয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।