র্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু
র্যাব হেফাজতে নওগাঁর চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৯ মে) দুপুর ২টায় তার স্বজনদের সঙ্গে প্রায় সাত ঘণ্টা কথা বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত এই তদন্ত দল। এদিন জেসমিনের ছেলে, ভাই, মামা, বাড়িওয়ালা ও দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন তার। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে এই কমিটি।
তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সার্কিট হাউস চত্বরে সুলতানার মামা একেএম নাজমুল হক মন্টু বলেন, ‘জেসমিনকে র্যাব আটকের পর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া ও দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন কী কী ঘটেছে তার বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন। এ ছাড়া, সুলতানা জেসমিন ও মামলার বাদী এনামুলের সঙ্গে টাকা লেনদেনের কাগজপত্র আমরা পেয়েছি বাসা থেকে। সেগুলো তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ভাই সুলতান মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আটকের আগে আমার বোন সুস্থ ছিলেন। র্যাব আটকের পর অসুস্থ হন। তাদের হেফাজতে চিকিৎসা চলা অবস্থায় মারা গেছেন। এ জন্য আমি র্যাবকেই দায়ী মনে করি। আশা করি এই তদন্তের মধ্যে দিয়ে প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হবে।’
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের ছেলে শাহেদ শাহরিয়ার সৈকত। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, আম্মুর সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার কাজ সম্পন্ন হোক। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের শাস্তি হোক।’
তদন্ত শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ‘একটা আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এই কমিটি গঠন করেছে। আজকে আমরা নিহত সুলতানা জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললাম। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেব।’
হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে। কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল ২২ মার্চ সকালে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল হকের) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন মানুষকে। এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। আটকের এক দিন পর ২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়।