বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার দিবা স্বপ্ন দেখে : সেতুমন্ত্রী
‘বিএনপির প্রতিটা নেতার প্রধান অপকর্ম মিথ্যা বলা’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেখতে দেখতে বিএনপির আন্দোলন ১৪ বছর শেষ হয়েছে, ১৫ বছরে পা দিয়েছে। তারা প্রতিদিন রাতে শুয়ে শুয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিবা স্বপ্ন দেখে।’
আজ রোববার (৪ জুন) দুপুরে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল জলিলের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আব্দুল জলিলের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকার কাছে, ইউরোপের কাছে রোজ রোজ নালিশ করেও কোনো কাজ হয়নি। নালিশ করে তারা পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সারা দিন দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন। সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। শেখ হাসিনা বিদেশে যান আনন্দ করার জন্য নয়। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যাননি। অথচ তাঁর সফর নিয়ে কথা বলতে মির্জা ফখরুল মুখে বাধে না, যা ইচ্ছে তাই বলেন। মিথ্যাচার তাঁদের একমাত্র সম্পদ। মিথ্যাকে পুঁজি করে তাঁরা আজকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তাঁকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চান।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘বিএনপির ৫২ দফা ভুয়া, ২৭ দফা ভুয়া। বিএনপির ৫৪ দল ভুয়া। তাদের আজকে বড় জ্বালা, পদ্মা সেতু হয়ে গেল। মেট্রোরেল চালু হলো। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। কিছু দিন লোডশেডিং হয়তো থাকবে—সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির অন্তর্জ্বালা কমবে না। নালিশ করতেই থাকবে।’
জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্যাংশন, যুদ্ধ, নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে আজ অস্থিতিশীল করে তুলছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে। একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাধারণ মানুষকে। আমাদের আজকে এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নই। এই কষ্টের জন্য দায়ী আজকে বিশ্বের সংকটজনক পরিস্থিতি।’
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে জ্বালানির বিষয়ে যে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন, সেটা আমাদের সংকট থেকে সামনের দিনগুলোতে উদ্ধার করবে। আপনাদের কাছে চামচাগিরি করব না। যা সত্য তাই বলব। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। শেখ হাসিনা শান্তিতে নেই। আজকে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ নেই। এই বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাঁকে নেতা বানিয়েছি।’
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জানুয়ারিতে আন্দোলন করতে পারেনি। ফেব্রুয়ারিতে পারেনি। মার্চ, এপ্রিল, মে মাসেও পারেনি। জুনেও পারবে না। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, নভেম্বরেও পারবে না। ডিসেম্বরে তো নির্বাচন। তখন হবে ফাইনাল খেলা।’
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনীতির জীবনে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তাঁর মতো নেতৃত্ব আর কাউকে পাইনি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, নওগাঁ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
স্মরণসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
স্মরণসভায় যোগদানের আগে দুপুর ১২টায় নওগাঁ শহরের চকপ্রাণ এলাকায় আব্দুল জলিলের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দলের অন্য নেতারা। এরপর ওবায়দুল কাদের নবনির্মিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন করেন। সবশেষে তিনি নওগাঁর সড়ক বিভাগের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সার্কিট হাউসে সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।