দুদক কার্যালয়ে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে হাজির হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ১০টা ২৭ মিনিটের দিকে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় কারও সঙ্গে কথা না বলে সরাসরি দুদক কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিনি।
জানা গেছে, প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৩ মে তলব করে চিঠি দিয়েছিল দুদক। তলবি চিঠিতে তাকে ৬ ও ৭ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।
এর আগে ভুয়া ব্যাংক হিসাবে টাকা অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠানো নোটিশে ২১ ও ২২ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
দুদকের উপপরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করেছে। দুই টিমের অপর দুই সদস্য হলেন—দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলিয়াজ হোসেন ও মো. আশিকুর রহমান।
এ বিষয়ে গত ১৭ মে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের একটি অভিযোগ এবং ২০২২ সালের আরও একটি অভিযোগ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেকেরই বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগের অনুসন্ধানের শেষ পর্যায়ে তার বক্তব্য প্রয়োজন। এ কারণেই তাকে তলব করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটির আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে–তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। অপরটি হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও কতিপয় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য সংবলিত ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করা হয়েছিল।