গণমাধ্যমকর্মী নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগনেতা সৈকতের আপত্তিকর বক্তব্যের অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এক অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় সাংবাদিকদেরকে সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এই আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। অনেকে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে (টিএসসি) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় দফা দিবস স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানেই এই ঘটনা ঘটে।
উপস্থিত সাংবাদিক ও দর্শকসূত্রে জানা যায়, তানভীর হাসান সৈকত বক্তব্য দিতে গেলে বেশ কয়েকটি টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন মঞ্চ থেকে ফুটেজ নিতে যান। এতে সৈকত রেগে যান এবং ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী রোজিনা রোজি বলেন, ‘ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বক্তব্য দেওয়ার সময় কয়েকটি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের ছবি বা ফুটেজ নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। সাংবাদিকদের বিবেক নেই, নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে—এসব বলতে থাকেন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইনানকে বলা হলে তারা দুঃখপ্রকাশ করেন। আজকের এই প্রোগ্রামটি সংবাদকর্মীরা বয়কট করেছে।’
মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা শেখালেন। এজন্য আমরা আজ ছাত্রলীগের এই ছয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠানটি বয়কট করলাম।’
এদিকে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘পুরো স্টেজে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকা সত্ত্বেও আমাকে ব্লক করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যামেরাপারসনরা। শ্রোতা ও আমি কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তখন তাদেরকে সরে দাঁড়াতে বলি আমি। এটা কি অন্যায় হয়েছে আমার? ভিডিও এবং ছবিতে স্পষ্ট প্রমাণ আছে, আমি কোন প্রেক্ষিতে তাদেরকে সরে দাঁড়াতে বলেছি। উপস্থিত সকল সাংবাদিক ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করেছেন।’
এনটিভির ফুটেজে দেখা যায়, তানভীর হাসান সৈকত সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে ধমকের স্বরে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিকদের বিবেক কমে যাচ্ছে। আমি কথা বলছি আর তারা আমার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এটা হচ্ছে যে আমাদের অবক্ষয়। জাতিগতভাবে এটা একটা অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত। আমি বক্তব্য দিচ্ছি, আর তারা আমার সামনে ব্লক করে তারা দাঁড়িয়ে কথা বলছে। এতটুকু মানবিক দৃষ্টিকোণ, এতটুকু দূরদর্শিতা থাকার প্রয়োজন রয়েছে একজন সাংবাদিকের।’
সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে সৈকত বলেন, ‘নো নো নো, আপনি আমার সামনে কেন ব্লক করবেন? দিস ইজ নট অ্যা ব্লগিং। ইউ নো? ব্লক কাকে বলে, ব্লগিং কাকে বলে, এটা সম্পর্কে জানেন? আপনি যদি জার্নালিজম সম্পর্কে জেনে থাকেন, ব্লক, আর ব্লগিং সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।’
এসময় স্টেজ থেকে আরেক নেতা সৈকতকে থামার কথা বলেন। তারপরও তিনি বলতে থাকেন, ‘আপনাকে এসব জানতে হবে, নীতিমালা কী সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। একজন বক্তব্য দেবে তার সামনে আপনি এসে ব্লক করে দাঁড়াতে পারেন না।’
এই বক্তব্যের মধ্যে আরও এক নেতা স্টেজের চেয়ার ছেড়ে উঠে তার পেছনে এসে দাঁড়ায়। তাকে থামতে বলেন। আর স্টেজ থেকে আগের সেই নেতা তাকে থামতে বলেন। তখন তিনি ওই নেতার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘না না, সেটা জানতে হবে। এটা জেনারেল নলেজ। তাকে জানতে হবে।’ তার এই কথার মধ্যেও ওই নেতা তাকে থামতে বলে যান।