৬৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের অবহিতকরণ সভা
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদীতে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে গ্যাসভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মাণ করা হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক প্রভাব নিরূপণে অবহিতকরণ সভার আয়োজন করা হয়।
অবহিতকরণ সভায় প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আজ দুপুরে গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পরিবেশগত সমীক্ষা দলনেতা মো. মুক্তারুজ্জামান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ মো. ফয়সাল, পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ জালাল আহমেদ চৌধুরী, সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সাইফুদ্দিন মাহমুদ, হংকং থেকে আগত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লাচস লাঙ্গ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আনিসুজ্জামান ভুঁইয়া।
সিইজিআইএসের পরিবেশগত সমীক্ষা দলনেতা মো. মুক্তারুজ্জামান বলেন, প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ-১৯৯৬ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ সংশোধিত (২০২১)-এর অধীনে মালয়েশিয়া ভিত্তিক EDRA Power Holdings Sdn Bhd এবং বাংলাদেশস্থ Winnievision Power Ltd. এর যৌথ মালিকানার গজারিয়া পওয়ার লিমিটেডের মাধ্যমে মেঘনাঘাট এলাকায় ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩ অনুযায়ী, প্রকল্পটি “লাল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র, প্রাথমিক পরিবেশগত সমীক্ষা, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবনিরূপণ প্রতিবেদন প্রয়োজন। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের (প্রস্তাবিত) পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ মো. ফয়সাল বলেন, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, আইএফসি, এআইআইবি নির্দেশিকাগুলো অনুসরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ধারণা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ দূরত্বের মধ্যে পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রভাব মূল্যায়নের জন্য যথাক্রমে মাঠ পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পাওয়ার প্লান্ট বিশেষজ্ঞ জালাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, পাওয়ার প্লান্টের চিমনির উচ্চতা হবে ৬৫ মিটার। পাওয়ার প্ল্যান্টটি শুধু প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস/এলএনজি জ্বালানির উৎস
হিসেবে আনুমানিক ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন যা জিটিসিএল কর্তৃক নির্মিত ৪২ ইঞ্চি বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইনডোর ইনস্টলেশনের জন্য মূল উপাদানগুলো হলো এইচ-ক্লাস বা জে-ক্লাস ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বাধিক উন্নত গ্যাস টারবাইন এবং ২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন স্টিম টারবাইন এবং আউটডোর ইনস্টলেশনের জন্য একটি জেনারেটর একটি স্টিম জেনারেটর। প্রস্তাবিত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির শীতলীকরণ ব্যবস্থা হিসেবে বন্ধ চক্রীয় এয়ার ড্রাফট (যেমন মেকানিক্যাল ড্রাফট) বিবেচনা করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ ও পরিচালনার ফলে স্থানীয় আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হবে এবং শিল্প উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিল্পায়ন এবং সামাজিক উন্নয়ন যেমন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি মানুষের জীবনধারার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করায় আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা উন্নত হবে । সরকারি পরিকল্পনার যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণের ফলে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন আরও উন্নত হবে। প্রকল্প এলাকার চারপাশে সবুজ বেস্টনি এবং খোলা জায়গায় গাছ লাগানো (বনায়ন) হলে ধুলো-বালি, শব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে, প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল এবং জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।