জাপানি শিশুদের জিম্মা নিয়ে মামলা জেলা জজ আদালতে চলবে : হাইকোর্ট
জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা—কার জিম্মায় থাকবে, এ সংক্রান্ত আপিল শুনানির জন্য আদালত পরিবর্তন চেয়ে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে এই আপিল মামলা জেলা জজ আদালত নিষ্পত্তি করবেন।
আজ সোমবার (১২ জুন) বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী এবং নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে গত ১ জুন জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল শুনানির আদালত পরিবর্তন চেয়ে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন হাইকোর্ট। পরে এই আবেদন নতুন বেঞ্চে উপস্থাপন করেন শিশুদের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির।
পরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল ঢাকার জেলা জজকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই আপিল ঢাকার জেলা আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ আপিল জেলা জজের আদালতে শুনানি না করে হাইকোর্টে শুনানির জন্য আবেদন করেছিলেন। হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।’
গত ৯ মার্চ জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে বিদেশে নিয়ে যেতে জাপানি মায়ের আবেদন নাকচ করে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে এ সংক্রান্ত আপিল জেলা জজ আদালতকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকবে।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ ও জাপানি মা নাকানো এরিকোর দুই শিশুকে জাপানি মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নাবালিকা দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে এ রায় দেওয়া হয়। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় দেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘মামলা করার কারণ আদালতের কাছে প্রমাণ করতে পারেনি বাদীপক্ষ, বরং আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, বাংলাদেশে নিয়ে আসা দুই শিশুর বেড়ে ওঠা জাপানে। সেখানে তারা লেখাপড়া করেছে। তাদের মা নাকানো এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনটি সন্তান জন্মের পর মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সন্তানদের পাশে ছিলেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, জাপানে বেড়ে ওঠা দুই শিশুর প্রাথমিক শুশ্রূষাকারী তাদের মা নাকানো এরিকো। অথচ তাকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ অন্য একটি দেশে নিয়ে আসাটা মাতৃত্বের বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রূপটিকে অসম্মান করার নামান্তর।’
রায়ে আদালত আরও বলেন, ‘বাবা হিসাবে ইমরান শরীফ নাবালিকা দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার পূর্ণ হকদার। তবে জাপানি মায়ের কাছে দুই নাবালিকার হেফাজত তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক, তথা সার্বিক মঙ্গলজনক বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’
এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন বাবা ইমরান শরীফ।