উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭.৯৫ শতাংশ তলিয়ে যাবে : পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এই শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ দশমিক ৩৪ থেকে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’
রোববার (১৮ জুন) সংসদে একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হবে।’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ‘প্রজেকশন অব সি লেভেল রাইজ অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্টস অব ইটস সেক্টরাল (কৃষি, পানি ও অবকাঠামো) ইমপ্যাক্টস’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘এতে দেখা যায়, বিগত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বছরে প্রায় তিন দশমিক ৮ থেকে পাঁচ দশমিক ৮ মিলিমিটার।’
শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দুই দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প পর্যায়ের চেয়ে এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা ২১০০ সালের মধ্যে ৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে পারে।’
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়ার হারও বহুগুণ বেড়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
১৯৯০ এর দশকের তুলনায় এখন দ্রুতগতিতে বিশ্বের বরফ গলছে। ২০২১ সালে ‘দ্য ক্রায়োস্ফিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বের মোট সমুদ্রের বরফ, আইসবার্গ ও হিমবাহের প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন টন গলে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তিন দশক আগে বরফ গলে যাওয়ার হার এখন ৫৭ শতাংশ দ্রুতগতিতে হচ্ছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘নাসা গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যান্টার্কটিকার বরফ প্রতি বছর গড়ে ১৫০ বিলিয়ন টন হারে গলে যাচ্ছে এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ প্রতি বছর গড়ে ২৭০ বিলিয়ন টন হারে গলে যাচ্ছে।’
শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘জার্মানওয়াচের প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, যদিও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বাংলাদেশের ভূমিকা নগণ্য।’
প্রধানত শিল্পোন্নত এবং বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বের প্রধান দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমানো এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
যাই হোক, জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে, সরকার ইতোমধ্যে বিশদ পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অভিযোজন ও প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।