পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুন)। এদিন যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবে।
ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।
ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। আজহা অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভু প্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ইতিহাসে অতুলনীয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল-আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’
গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে এই ঈদ জামাত।
প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমাম হিসেবে থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ ক্বারী মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।
এই পাঁচটি জামাতে যদি কোনো ইমাম উপস্থিত না থাকেন তবে, বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মাওলানা জাকির হোসেন।
আবহাওয়া প্রতিকূল হলে জাতীয় ঈদগাহের ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।
সারা দেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজনিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কোরবানি করা পশুর রক্ত বা বর্জ্য যাতে পরিবেশে দুর্গন্ধময় না হয় সেবিষয়ে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুতবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।