ত্যাগের মহিমায় দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহ সন্তুষ্টির আশায় পশু কোরবানি করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ত্যাগের মাধ্যমে আনন্দ এই বিশ্বাসে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। এরপর আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী কেনা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করছেন।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শত ক্লান্তি মাড়িয়ে হলেও শহরের মানুষ ফেরে গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের কাছে। ঈদের দিন ভোরে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে বৃষ্টি বাধা উপেক্ষা করে ঈদগাহে যায় মানুষ। ঈদের জামাতের পর খুতবায় ইমামরা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানির অমর কাহিনি বয়ান করেন।
ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। জামাত শেষে কোলাকুলি করে প্রকাশ করা হয় পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা। ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মাংস ভাগ করে দেওয়া হয় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের মাঝে।
পশু কোরবানিই ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। ঈদের পরও দুই দিন পশু কোরবানি দেওয়া হয়। ঈদের আগে পশু কেনার পর পরিচর্যা করার মাধ্যমে যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, রাজধানীর মানুষের মধ্যে এবারও তা দৃশ্যমান।
এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানি আমাদের মধ্যে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করার আহ্বান জানান। তিনি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধান জামাত শুরু হয়, যা শেষ হয় ৭টা ৪০মিনিটের দিকে।
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্পাদক ড. মাওলানা মুশতাক আহমেদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া মসজিদের মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। এই ঈদ জামাতে মোকাব্বির ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের কারি মো. এমদাদুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ জামাতে অংশ নেন।
বায়তুল মোকাররমে পাঁচ জামাত
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার পঞ্চম ও শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ জামাত শুরু হয়। নামাজ শেষে হয় ঈদের বিশেষ খুতবা। খুতবা ও মোনাজাত শেষ হয় বেলা ১১টার পর। বায়তুল মোকাররমে প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, তারপর এক ঘণ্টা পর পর তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির মহামারি থেকে মুক্তিসহ কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত হয়। মোনাজাতে বিশ্বের মুসলিমদের শান্তি কামনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে তাদের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।
শোলাকিয়ায় সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত
মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল এই মাঠের ১৯৬তম ঈদুল আজহার জামাত। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকালে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে কয়েক হাজার মুসল্লি ঈদ জামাত আদায় করেন।
আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণের কারণে ঈদগাহ মাঠের অনেক স্থানে পানি জমে যায় এবং মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে তিনবার বন্দুকের গুলি ফুটিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করেন স্থানীয় মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। জামাত শেষে দেশের মানুষের কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়।