সমাবেশে যা বললেন বিএনপির নেতারা
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা কে কী বলেছেন তা তুলে ধরা হলো-
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের এখনও কারাগারে রেখেছে। এ সমাবেশে এমন কেউ নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। বিশেষ শ্রেণির পুলিশ প্রশাসন কিছুদিন আগে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়েছে। বিএনপি নেতাদের যাদের নামে মামলা নেই তাদের মামলা দেওয়ার জন্য, যাদের মামলা আছে তাদের সাজা দেওয়ার জন্য। আমি বলতে চাই তাদের এ সুযোগ দেওয়া হবে না।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘গত পনের বছরে বহু মামলা, সাজা আমরা দেখেছি। বিএনপি এসবে আর ভয় পায় না। তাই আমি আহবান জানাই কিছু পুলিশের কথায় আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। এ সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো পরিস্থিতি আমরা সামাল দিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মানুষ একটি ঘোষণা শুনতে চায়। সেটির অপেক্ষা রয়েছেন সবাই। যা আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব দিবেন। শেখ হাসিনা পাবলিকের সেন্টিমেন্ট বুঝেই ভোট চুরিতে নেমেছে। দিনের ভোট রাতে চুরি করেছে। বিগত নির্বাচনের মতো ভোট চুরি করতে ইতোমধ্যে ডিসিদের পরিবর্তন এবং ওএসডি করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোট চুরির জন্য যত প্রকল্প নিয়েছেন সব নসাৎ করে দেওয়া হবে। যারা এ ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে চুরি করে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু, সেটা আর হতে দেওয়া হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য। কিন্তু গত পনের বছরে তা হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে তারা বাকশাল কায়েম করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দেশের মানুষের সততাকে শেষ করে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আজকে বিএনপি মহাসচিব কী ডাক দিবেন আমি জানি না। তবে, মহাসচিবের ডাকের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হবে। যুদ্ধের ময়দানে নীতিবাক্য দিয়ে হয় না। আমাদের নেতাকর্মীদের এক ঘা দিলে আমরা দুইটা দেব। মিথ্যার ওপর রাজত্ব করবেন আর কতকাল? রাজত্ব করার বেশিদিন সময় নেই । বাংলাদেশে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিনাভোটে সরকার নির্বাচন করে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেই যাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা-সাজা দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ভোট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, দেশের জনগণ তা হতে দেবে না।’
সভাপতির ভাষণে আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করব। তারেক রহমানের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও জেলে রয়েছে। আমরা আর জেলে যাব না। যদি জেল দেওয়া হয়, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে কারাগার ও থানার সামনে উপস্থিত হয়ে সমাবেশে করবেন।’
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ বলেন, ‘সমাবেশে সবাইকে শপথ পড়িয়ে আজকে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তার বাস্তবায়ন ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না। ৯০ এর আন্দোলনের মতো এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। পুলিশ ভাইদের বলবো নিরপেক্ষ হয়ে যান। আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি, আর ধৈর্য্য ধরব না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘দিনের ভোট রাতে করে এবং ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছে বর্তমান সরকার। এক দফার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বক্তব্য একটাই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারা আনা হবে।’
আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কথা একটাই, আপনাকে যেতে হবে। ভারত ম্যাসেজ দিয়েছে তারা আপনার সঙ্গে নাই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনার সঙ্গে নাই। আমেরিকা আপনার সঙ্গে নাই। আপনার সঙ্গে কেউ নাই। নিজে ক্ষমতা থেকে নামবেন? নাকি আমরা নামানোর দিনক্ষণ ঠিক করব। আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে নির্বাচন হবে না। যত গুম খুন করেছেন সবকিছুর বিচার হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দেশ নায়ক হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। আর ৯০ দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে দেশনেত্রী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। আর গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশ নায়ক হবেন তারেক রহমান।’ ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদন বলেন, ‘আর বেশিদিন বাকি নেই। শিগগিরই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়বেন। দেশ মুক্তি পাবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা দুই টাকা দিয়ে গণভবন কিনে নিয়েছিলেন। এবারও তা নিজের দখলে রাখতে চায়।’ ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বক্তা অনেকেই। তবে, বক্তব্য একটাই, শেখ হাসিনাকে সরানো। যার কারণে দেশের স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ থাকলে মহাসমাবেশ হয়। আর মহাসমাবেশ হলে তা হয়ে যায় মহাসমুদ্র। আমরা নিত্যপণ্যসহ ১০ দফা দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু, স্বৈরাচার তা মানে না। প্রতিনিয়ত কাঁচা মরিচ, খাদ্যদ্রব্যসহ বিদুৎতের মূল্য বেড়েই চলছে। জনগণ ফুঁসে ওঠেছে। এখন পালাবার পথও পাবেন না।’
আরেক যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘এখন আর দিনের ভোট রাত করতে দেওয়া হবে না। রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভোট রক্ষা করা হবে।’
বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারাও বক্তব্য দেবেন। সমাবেশের শুরুতে ওলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হক পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপি (উত্তর ও দক্ষিণ) আয়োজিত সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান সভাপতিত্ব করছেন। সমাবেশ সঞ্চালনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।