নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে নির্বাচনের সুফল দেশবাসী পাবে না : ইইউকে এবি পার্টি
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নির্বাচনী কাঠামো পরিবর্তন না হলে, জনরায় প্রতিফলিত হওয়ার মতো সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আর কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত না হলে, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো সুফল দেশবাসী পাবে না।
আজ শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থানীয় দপ্তরে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময়কালে এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ইইউ প্রতিনিধি দল এবি পার্টির নেতৃবৃন্দের কাছে আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর বাস্তবতা, উপকারিতা এবং সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চান। লিখিত ব্রিফিং-এ এবি পার্টি প্রতিনিধিরা দেশের নির্বাচনী ইতিহাস তুল ধরে বলেন, বাংলাদেশে গত ১১টি সাধারণ নির্বাচনের চারটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এই নির্বাচনগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সাতটি নির্বাচন ছিল কলঙ্কিত ও প্রহসনমূলক যা জাতি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আবারও দেখেছে। সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানে সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে বাতিল করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রতিনিধি দল জানায়, রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য গায়ের জোরে বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ইতিহাস তুলে ধরে এবি পার্টি নেতারা ব্রিফিংয়ে বলেন, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বদলীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ তৈরি হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে সেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে সরকার তার নির্বাচনী ম্যান্ডেট ও শপথ ভঙ্গ করেছে। গণভোটের আয়োজন না করেই ৩০ জুন ২০১১ তে তাড়াহুড়ো করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় সরকার। সংসদীয় কমিটির সর্বসম্মত মতামতকেও উপেক্ষা করে তারা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে যা বর্তমান রাজনৈতিক অচলায়তন ও সঙ্কটের প্রধান কারণ।
এবি পার্টির ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছরে বাংলাদেশ আজ সত্যিকারের যুগ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের আগামীর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পারলে বাংলাদেশ আবারও পথ হারাবে। স্বাধীন, উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দীর্ঘমেয়াদে কর্তৃত্ববাদী ধারার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তাই নির্বাচনী কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে গণরায় প্রতিফলনের পথ নির্বিঘ্ন করতে হবে। নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে, সত্যিকার অর্থে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। এ সব কারণে পর্যবেক্ষণের কোনো সুফল দেশবাসী পাবে না বরং আবারও সেটা একটা অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারকে অন্যায্য বৈধতা দেয়ার পথ পরিষ্কার করবে বলে এবি পার্টি মনেকরে।
এবি পার্টির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও ব্যারিষ্টার যুবায়ের আহমেদ ভূইয়া, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম এবং সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিষ্টার নাসরীন সুলতানা মিলি।
উল্লেখ্য নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে রিকার্ডো চেলারির নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের একটি প্রাক্-তথ্যানুসন্ধানী দল গত রোববার ভোরে ঢাকায় আসে।