আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কী হবে, ভাবতেই ভয় হচ্ছে : স্বাস্থ্যের ডিজি
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ার কথা আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে। তখন পরিস্থিতি কী হবে তা ভাবতেই ভয় হচ্ছে।’ যদিও জরুরি অবস্থা জারি কিংবা মহামারি ঘোষণার মতো কোনো অবস্থা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ঢাকার এফডিসিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার, অথচ এ বছর ইতোমধ্যে তা ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে, এখনও জরুরি অবস্থা জারি অথবা মহামারি ঘোষণার মতো কোনো অবস্থা হয়নি।’
স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ না করে সারা বছর ধরেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ডেঙ্গুতে অসহায় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে জরিমানায় আদায়কৃত অর্থ ও সিটি করপোরেশনের বিশেষ তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘টেস্ট ফি, বেড ভাড়াসহ বিবিধ খরচ নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা এর জন্য একমাস সময় চেয়েছে। তবে, শুধু আইন দিয়ে নয়, মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে বিবেকবান মানুষ হিসেবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা উচিত।’
হাসপাতাল থেকে রোগীর ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্থান না থাকার কথা বলে ডেঙ্গু রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’
এ সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতার জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। এগুলো হলো—
১. এডিস মশা নির্মূলে শুধু মৌসুমী কার্যক্রম পরিচালনা না করে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে বছরব্যাপী কার্যকর ওষুধ ছিটিয়ে সমন্বিত কীট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাসা বাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নর্দমাসহ সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
২. এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক কমিটি গঠন করা এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা।
৩. এডিস মশা নিধনে আমদানিকৃত কীটনাশক স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রদান করা।
৪. এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার অভিযোগে জরিমানা বাবদ আদায়কৃত অর্থ দিয়ে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া অসহায় পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৫. মশা নিধন ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কীটতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, মেডিকেল ও ভেটেরিনারি পেশার ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করা।
৬. গরিব মানুষসহ যাদের প্রয়োজন তাদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি মশার কামড় থেকে রক্ষায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা।
৭. ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা।
৮. ডেঙ্গু প্রতিরোধে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে সারাদেশে প্রদর্শন করা ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি রেডিওতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা।
৯. বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টেস্ট ফিসহ অন্যান্য খরচ নির্ধারণে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১০. সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধিসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
‘নাগরিক সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরিজিত করে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, সাংবাদিক ফালগুনী রশীদ ও সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা।