চলতি বছরেই তেল আমদানিতে নতুন যুগে প্রবেশ করবে দেশ
চলতি বছরেই মাদার ভেসেল থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাস করা হবে। এর মধ্যদিয়ে দেশের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যবস্থা নতুন মাত্রায় প্রবেশ করবে। এতে বিপুল অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। বছরে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই এসপিএম দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে আরও লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে। প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসপিএম প্রকল্পটি চলতি বছরের মধ্যে চালু করা হবে। এর মধ্যে প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির পৃথক পরীক্ষা চালানো হয়েছে।’
এসপিএম প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মনজেদ আলী শান্ত বলেন, ‘আমদানি করা পেট্রোলিয়াম মাদার ভেসেল থেকে স্টোরেজ ট্যাংকে স্থানান্তর করতে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।’
বর্তমানে সমপরিমাণ তেল লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে খালাস করতে ১১ থেকে ১২ দিন সময় লাগে। এটি খুবই সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রকল্প পরিচালক মনজেদ আলী শান্ত বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর মাদার ভেসেল থেকে জ্বালানি বহন করার জন্য কোনো লাইটারেজের প্রয়োজন হবে না।’
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় আট হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ও চীনের একটি জিটুজি প্রকল্পের আওতায় ৯০ একরেরও বেশি জমিতে এসপিএম নির্মিত হয়েছে।
‘একবার এসপিএম চালু হয়ে গেলে, বাইরের অ্যাঙ্করেজ থেকে জ্বালানি ট্যাংকে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বহন খরচ কমে আসবে এবং বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে’, বলেন মনজেদ আলী শান্ত।
কর্মকর্তারা জানান, এতে এক দশমিক ৮০ লাখ লিটার অপরিশোধিত তেল এবং এক দশমিক আট লাখ লিটার পরিশোধিত তেল ধারণক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ট্যাংক রয়েছে।
আমদানি করা পেট্রোলিয়াম তেল সরাসরি এসপিএমে খালাস করার জন্য ইতোমধ্যে স্থল থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
এসপিএম প্রতি বছর নয় মিলিয়ন টন খালাস করার ক্ষমতা রাখে। অপরিশোধিত তেল শোধনের জন্য এসপিএম প্রকল্প থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইএফএল) পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার পাইপলাইনও নির্মাণ করা হয়েছে।
এসপিএমের ৪৫ হাজার টন অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে, প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন এবং ৫৮ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংকের কাজও শেষ হয়েছে এসেছে।
ছয়টির মধ্যে তিনটি ট্যাংকের প্রতিটির ৬০ হাজার লিটার অপরিশোধিত তেল ধারণক্ষমতা রয়েছে। বাকিগুলোর প্রতিটি ৩৬ হাজার লিটার ডিজেল সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
এসপিএম 'বোয়া'র নির্মাণ সম্পন্ন করেছে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক ব্লু ওয়াটার। প্রকল্পটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের প্রথম এসপিএম সিস্টেম তৈরি করছে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন বড় মাদার ভেসেল থেকে উপকূলীয় ট্যাংকগুলোতে পেট্রোলিয়াম ফেরি করার জন্য বিপিসি বর্তমানে লাইটারেজ বা ছোট জাহাজের জন্য পাঁচ দশামিক ৫০ মার্কিন ডলার দেয়। এখন বিপিসির খরচ কমিয়ে দেবে এসপিএম।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ছয় মিলিয়ন টন অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত তেল আমদানি করে। এর মধ্যে এক দশমিক তিন মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল এবং অবশিষ্ট পরিমাণ পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য।
কর্মকর্তারা জানান, মুরিং পয়েন্ট থেকে একটি ৩৬ ইঞ্চি প্রশস্ত পাইপলাইন মাতারবাড়ির কালামারছড়ার ট্যাংকে অপরিশোধিত তেল বহন করে। পরে ১৮ ইঞ্চি চওড়া পাইপের মাধ্যমে ২২০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে যাওয়া হয় তেল।
আগামী আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসপিএম প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইনটি গভীর সমুদ্রের মুরিং পয়েন্ট এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের মধ্যে নির্মিত হয়েছে।