মাঠ দখলের লড়াইয়ে আরও সংঘাতের আশঙ্কা
দেশের বড় দুই দল যার যার একদফা নিয়ে এখন বলতে গেলে পুরোপুরি মাঠে নেমে গেছে৷ ফলে ইতোমধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ আর মামলা শুরু হয়ে গেছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না করে রাজপথে ফয়সালা হয়, তার ফল হবে ভয়াবহ৷
গত ১২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি একদফা কর্মসূচি দেয়৷ তাদের একদফা হলো সরকারের পতন৷ সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ একইদিনে শাসক দল আওয়ামী লীগও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এক দফা ঘোষণা করে৷ তাদের একদফা হলো শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন৷ এরপর ১৮ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা এবং আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভা যাত্রার দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ কোনোটা ছিল আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, আবার কোনোটা ছিল ত্রিমুখী৷ সেসব জায়গায় দুই দল এবং পুলিশ সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ লক্ষীপুরে বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের একজন সদস্য এই সংঘাতে নিহত হন৷ পরেরদিনও বিএনপির পদযাত্রা এবং আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়৷
আজ শনিবার (২২ জুলাই) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সবাবেশ করবে বিএনপি৷ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগও সারা দেশে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামে কর্মসূচি পালন করছে৷
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে বলেছেন, সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে৷ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই, তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করলে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না৷
বিএনপি এখন টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের দখল শক্ত করতে চায়৷ আর সেজন্য তারা শুধু বিএনপি নয়, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছে৷ সমমনা ৩৭টি দলকে মাঠে আরও সক্রিয় করতে চাইছে৷ সমমনা দল আরও বাড়াতে চাইছে৷
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবে৷ তাদের টার্গেট, এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থেকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করা৷ আর বিএনপির টার্গেট, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে না দেওয়া৷
বিদেশিদের তৎপরতায় এখন পর্যন্তু দুই দলকে সংলাপে রাজি করানো যাচ্ছে না৷ দুই দলের অনঢ় অবস্থানের কারণে সংলাপের আশা আপাতত করা যাচ্ছে না৷ তারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যাদের প্রতিনিধির সঙ্গেই কথা বলেন না কেন, যার যার একদফাই তুলে ধরছেন৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এস কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মাঠে নেমেছি৷ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব৷ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করার পর আমরা ঘরে উঠব৷ বিএনপি চাইলেও কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না৷ দেশের মানুষ তাদের প্রতিরোধ করবে৷’
এস এস কামাল হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে বিএনপি রাজপথে আছে৷ অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছে৷ বেগম খালেদা জিয়া ঘরে চলে গেছে৷ মির্জা ফখরুলও ঘরে চলে যাবে৷ মির্জা ফখরুল তারেক জিয়ার নির্দেশে একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে৷ তারা দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷ এর জবাব জনগণ দেবে৷’
এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা ধ্বংসাত্মক কাজ না করতেই তো আমাদের নেতাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে৷ গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে৷ কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না৷ এগুলো স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের কাজ৷ আমরা এই দমন-পীড়ন উপেক্ষা করেই আন্দোলনের মাঠে থাকবে৷ আমাদের জয় হবেই৷’
এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, ‘সরকার এখন নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে৷ কিন্তু, এই হুমকিতে কোনো কাজ হবে না৷ সরকারকে বিদায় নিতেই হবে৷’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই আন্দোলনে যদি রক্ত ঝরে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে৷ ওবায়দুল কাদেরকে নিতে হবে৷ এই দায় আওয়ামী লীগের৷ তারা জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা ধরে আছে৷ জনগণ হলো রাষ্ট্রের মালিক৷ তাদের মালিকানা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘রাজপথে সমাধান অনেক ক্ষতি ডেকে আনে৷ আমরা অতীতে তা দেখেছি৷ তাই প্রকাশ্যে না হলেও পর্দার আড়লে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন৷’
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘এর নানা ধরনের পরিণতি হতে পারে৷ ২০০৬ সালের মতো একটা ভিন্ন ধরনের সরকারও চলে আসতে পারে৷ আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখেও একটি পরিস্থিতি আমরা দেখেছি৷ সংঘাত আরও বাড়বে, নয়তো অন্য কোনো শক্তি সুযোগ নেবে৷ আগে আমরা তো এরকমই হতে দেখেছি৷’
অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির একটা গ্লোবালাইজেশন হয়েছে৷ অতীতে এমন কখনো দেখা যায়নি৷ এখন বাইরের দেশগুলো কতটা রোল প্লে করে তা দেখার আছে৷ আমরা তো সব কিছু জানি না৷ আর রাজনৈতিক নেতারা সবকিছু বলেন না৷ বাইরে যা বলেন ভেতরে হয়তো অন্যকিছু হচ্ছে৷ এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়৷’