সাংবাদিকদের আয়কর : হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি চেম্বার কোর্ট
সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নবম ওয়েজবোর্ডে গ্র্যাচুইটি ও আয়কর সংক্রান্ত মস্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আগামী ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ সোমবার (২৪ জুলাই) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শখ সাইফুজ্জামান (জামান)। রিট পিটিশনার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. কাজী আকতার হামিদ। তার সঙ্গে ছিলেন দিদারুল আলম দিদার।
ড. কাজী আকতার হামিদ জানান, সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর এবং আনুতোষিক সংক্রান্ত দুটি সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত বছর ৬ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। ফলে, সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে গতকাল একটি আবেদন দাখিল করা হয়। আবেদনে হাইকোর্টের দেওয়া রায়টি স্থগিত চায় তারা।
এই আইনজীবী বলেন, ‘আজ আদালতে আমরা বলেছি, সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর এবং আনুতোষিক বিষয়ে ইতোপূর্বে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট আজ হাইকোর্ট রায় স্থগিত করেননি। বিষয়টি আগামী ২৮ আগস্ট আবেদন আকারে আপিল বিভাগ বেঞ্চে শুনানির জন্য থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন।’
ড. কাজী আকতার হামিদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের বেতনের অনুকূলে যে আয়কর হয় তা মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রান্তিক সুবিধা (প্রিঞ্জ বেনেফিট) হিসেবে সবসময় পেয়ে এসেছেন। এটি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে রায় রয়েছে। আর বছরে মূল বেতনের সমান দুটি আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি পাবেন বাসস-এর সাংবাদিক-কর্মচারীরা, এটি বাসস রুলসে নিশ্চিত রয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। এই বোর্ড অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শের পর ‘নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ চূড়ান্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে সরকার। সে প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে।
একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বেশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।
অথচ প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন। নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান।
তখন রিটটির প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন। রুলে আয়কর ও গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশ দুটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।