ফাঁসির দুই আসামির সঙ্গে শেষ দেখা পরিবারের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদের বাসার কেয়ারটেকার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা আজিমুদ্দিন, চার ভাইসহ পরিবারের প্রায় ৩৫ সদস্য আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর ১টায় কারাগারে প্রবেশ করে এবং বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে কারাগার থেকে বের হয়ে যায়। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরের বাবা হুইল চেয়ারে করে ছেলেকে শেষবার দেখে গেছেন। এ সময় তার হাতে ছিল তসবিহ।
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামির সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখা করার কারা কর্তৃপক্ষের চিঠির বিষয় জানাজানি হলে দুপুর ১২টার পর পরই কারাগারের ফটকের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা সমবেত হন। এর আগেই মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা করে কালো রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাসে করে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়।
গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে যাওয়া জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ বিপরীত দিকের গেট (যেটি সচরাচর ব্যবহার করা হয় না) দিয়ে তাদের বের করে দেয়।
গণমাধ্যমকর্মীরা সেই গেটে ছুটে গিয়ে কথা বলেন জাহাঙ্গীরের ফুফু, ভাবি ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে। জাহাঙ্গীর তাদের কী বলেছেন এবং তিনি কেমন আছেন, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, জাহাঙ্গীর স্বাভাবিক আছেন। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই নবাব জানান, তিনি তাঁর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। সবাইকে ভালো থাকতে বলেছেন। এর বাইরে আর কিছু বলতে রাজি হননি তাঁরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাক্ষাৎকারী দলের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা সাংবাদিকসহ অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছে।
তবে কারাগারে প্রবেশের আগে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান জানান, গত রোববার (২৩ জুলাই) কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের চিঠি দিয়ে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা করতে বলেছিল। তবে আপিল বিভাগে রিট পিটিশন পেন্ডিং থাকায় সেদিন তাঁরা দেখা করেননি। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে আপিল বিভাগ রিটটি খারিজ করে দেওয়ায় তাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কামাল হোসেন জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) থেকে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যেকোনো দিন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কার্যকর করা হবে।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
এর আগে জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়। আর ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়। পরে দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করলে হজে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকোচ করে দেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসা থেকে নিখোঁজ হন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। ৩ ফেব্রুয়ারি বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ ওই দিন নগরীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
এরপর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। পরে দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। তবে আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন।