দায়িত্ব পালনকালে নির্যাতন, সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ রোববার (৩০ জুলাই) বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। গতকাল শনিবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়।
ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চলনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিআরইউ সভাপতি মোরসালীন নোমানী, বিএফইউজের সিনিয়র সহসভাপতি মোদাব্বের হোসেন, কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, ডিইউজের সহসভাপতি রফিক মোহাম্মদ, রাশেদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রফিক লিটন, দপ্তর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য এইচ এম আল আমিন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও এই সরকার এক সাথে যায় না। সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই সরকারের অভ্যাসগত রোগ। এটা তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, দিনকালসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। মোট কথা তারা সংবাদমাধ্যমকে সহ্য করতে পারে না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব না। তাই তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন এই সরকার আসার পর সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তারা বহু গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। সাগর-রুনীসহ ৪৯ জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। গতকাল সাংবাদিকদের ওপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে।’ সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে ব্যাংক লুট করেছেন, দেশের টাকা বাইরে পাচার করেছেন তা আমাদের জানা।’
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, ‘আমরা নাকি উন্নত দেশে আছি। উন্নত দেশে প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষকরা বেশি বেতন পায়, সন্মান পায়। কিন্তু এদেশে শিক্ষকদের বেতন নেই, সন্মান নেই।’ তিনি বলেন, ‘কালকে ঢাকা শহরে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা যৌথ তাণ্ডব চালিয়েছে। অসংখ্য সাংবাদিক আহত হয়েছে, একজন এখনও জেলে। এদেশে ৬০জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। একটা হত্যারও বিচার হয়নি। আলোচিত সাগর রুনির হত্যার পর সরকার বলেছিলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন এখনও দেয়া হয়নি। আমরা ধিক্কার জানাই। সাংবাদিক নির্যাতন-হত্যার বিচার চাই।’
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘সাংবাদিকদের উপর গতকাল সরকার পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে আবারও প্রমাণ করলো যে তারা গণমাধ্যমের বিরোধী। তারা গণমাধ্যমকে ভয় পায়। তাই তারা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়ে গণতন্ত্র ও মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়। তাই এই সরকারের কাছে কোনো দাবি জানিয়ে লাভ নাই। এই সরকারের পতনই হবে এই হামলা নির্যাতন বন্ধের একমাত্র পথ।’ এসময় তিনি সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো পুলিশ ও তাদের নির্দেশ দাতাদের মার্কিন ভিসা নীতির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ‘গত কয়দিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বাহিনীর হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই নির্যাতন নতুন না। এই সরকারে আমলে অন্তত ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই সরকারের অন্যায় দাবি, অন্যায় কথা মানতে নারাজ তাদের ওপর এই সরকার নির্যাতন চালায়। যে সকল গণমাধ্যম তাদের অন্যায় রূপ তুলে ধরে সে সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা গণতন্ত্রের হত্যাকারী। তারা এদেশে গণতন্ত্র আর ফিরে পেতে দিতে চায় না। তাই এই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘যাদের বেতন আমাদের ট্যাক্সের টাকায় দেওয়া হয়, তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে, নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ তাদের দায়িত্ব হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়ে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের তো মানবিক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউয়ের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নাসিম শিকদার, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, নির্বাহী সদস্য নিজাম উদ্দিন দরবেশ, রাজু আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য তাহমিনা আক্তার, দৈনিক সমাচারের ইউনিট চীফ আবু হানিফ, কালবেলার ইউনিট চীফ গিয়াস উদ্দিন রাকিব প্রমুখ।