পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ সংবিধান পরিপন্থী : রিজভী
পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ পুলিশের অনুমতি নিয়ে হয়নি। নব্বইতে পুলিশের অনুমতি নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন হয়নি। রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি সংবিধান পরিপন্থী। রাজনৈতিক দলের কাজ হচ্ছে পুলিশকে অবহিত করা, আর পুলিশের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া।’ আজ রোববার (৩০ জুলাই) রাতে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল নিয়েছে সরকার।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে রামদা-হকিস্টিক নিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলো, যা সকল গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রকাশ পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো যাদের ওপর হামলা করা হলো তাদেরকেই আসামি করে মামলা করল পুলিশ।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব বলেন, “ভোটবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির এক দফার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শতকরা ৮০ ভাগের বেশি জনগণ। আজ শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে। ‘স্টেপ ডাউন শেখ হাসিনা’ লিখে পোস্ট দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বদরবারে বারবার প্রমাণিত হয়েছে নিশিরাতের সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
রিজভী বলেন, ‘আজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন-আগামী অক্টোবরে তফশিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। তবে, এই স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়িত হবে না, শেখ হাসিনা আরেকটি ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করার অপচেষ্টা করছেন, জনগণ তা হতে দেবে না।’
বিএনপির এই নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘সরকার নাকি মানবতা দেখিয়েছে! এক বছরে রাজপথে ১৭ জনকে হত্যা করেছেন, তখন কোথায় ছিল মানবতা? অসংখ্য নেতাকর্মীকে পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোথায় ছিল মানবতা? গতকাল শনিবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে পুরো রাজধানীকে রক্তে রঞ্জিত করেছেন কোন মানবতা থেকে?’
রিজভী বলেন, ‘সরকারি বাহিনীর গতকালের সহিংস আক্রমণের খবর বিশ্বগণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল নেয় সরকার। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করলেও জনগণ এসব আমলে নেয়নি। বরং, সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের খবরই জনগণের মুখে মুখে।’
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার রাজধানীতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় আহত ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের তালিকা প্রকাশ করে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন রিজভী। তিনি জানান, গতকাল ও আজকে ৫৪৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক করা ২৫০ নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছেন ৬৫০ জনের অধিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফোরকান আহমেদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, কৃষকদলের যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ।