ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় ভিপি নুরসহ আহত ৩০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার (২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনের রাস্তায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর করে।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ৩০ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট ও অন্যান্য কয়েকজন নেতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা, মাদরাসা শিক্ষার্থী রেজাউল হত্যার বিচার এবং বুয়েট শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদে পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। এর আগে, বিকেল সাড়ে তিনটা থেকেই টিএসসি ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া, পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে। এসময় তার মোটরসাইকেল বহরে কয়েকশো নেতাকর্মী ছিল। এরপর ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা তাদের নির্ধারিত সময়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছালেই তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগ। মারধর করতে করতে ধাওয়া দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে এনেও মারতে থাকে তাদেরকে। পরে আহতরা রিকশায় করে চিকিৎসার জন্য চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর পর্যন্তও রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শোডাউন দিতে থাকেন তারা।
হামলায় ভিপি নুরুল হক নুরসহ কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন, ঢাকা কলেজ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সহসভাপতি রাকিব হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মেহরাব মেহেদি, বাংলা কলেজের সাধারণ সম্পাদক আকাশ, দক্ষিণ মহানগরের কর্মী ইউসুফ, চকবাজার থানার সদস্য রায়হান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, কর্মী জিসান, আলভীসহ আরো অনেকে আহত হন।
ছাত্র অধিকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট বলেন, ‘শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। যারা সবসময়ই হামলা করে থাকে তারাই আজও লাঠি, স্টিক, জিও পাইপ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। ভিপি নুর ভাইকে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তার শরীর রক্তাক্ত হয়েছে। জিহ্বা দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তিনি এখন কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে আছেন। তার সাথে আরও ৭-৮ জন ওখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ঢাকা মেডিকেল এ প্রায় ৩০ জনের মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক তওহীদ মির্জা বলেন, ‘আমরা সমাবেশস্থলে আসার সাথে সাথেই ঢাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তাদের হাতে লাঠি ও হকি স্টিক ছিল। হামলার সময় তাদের মধ্য থেকে বলা হচ্ছিল যে, ‘আজকে নুররে মাইরা ফালা, মাইরা ফালাইলেও কোন সমস্যা নাই। এটা শোনে মারধরের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয় তারা। তারা আজ ভিপি নুরকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই হামলা করেছে। হামলার পর ঢাকা মেডিকেলে ত্রিশজনের মতো চিকিৎসা নিচ্ছে।’
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল বহিরাগত অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য গোপন ষড়যন্ত্র করেছে। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার সামনে এসেছে। তারই প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করতেছিল। এ সময় নুরুল হক নুরসহ একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায়। পরে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করে।’
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে নুরের যে অবৈধ সম্পর্ক সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি এবং এ কারণে নুরকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে।’
হামলায় ছাত্রলীগের অনেকেই জড়িত আছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ জড়িত আছে কি না আমরা সেটা খুঁটিয়ে দেখব।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মারামারির ঘটনা থেকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ৯-১০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
যদিও বাচ্চু মিয়ার এ পরিসংখ্যানকে ভুল আখ্যা দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক তওহীদ মির্জা বলেন, শুধু ঢাকা মেডিকেলেই ৩০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। উনি (বাচ্চু মিয়া) হয়তো সবার হিসেবটা পাননি। কারণ, আমরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একেকজন শাখা প্রধান একেক সময়ে কয়েক ধাপে টিকেট কেটেছি। এ হিসেবে ৩০ জনের মত হয়।’