জিয়া পরিবারকে সরকার রাজনীতি থেকে নির্মূল করতে চায় : বিএনপি
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার রায়কে আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশী রায় বলে দাবি করেছে বিএনপি। এই রায়ের মধ্য দিয়ে ফরমায়েশী রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো এমন দাবি করে বিএনপি বলছে, সরকারের উদ্দেশ্য জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নির্মূল করা।
গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় রায়-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগের দলীয়করণের এটা আর একটি নিকৃষ্ট নজির। তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেওয়া হবে এ নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কারণ আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের নির্মূল করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়, সেই নীলনকশা ধরেই সরকারপ্রধান এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোন প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। আজ এই ফরমায়েশী রায় দেওয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্র শূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশজুড়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে শুধু নব্য বাকশালী দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী রাখতে। সেজন্য আইন আদালতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। যে সমস্ত বিচারক বিবেকবান, ন্যায়বিচার করার কারণে তারেক রহমানকে মামলা থেকে খালাস দেওয়ায় বিচারক মোতাহার হোসেন আর দেশে থাকতে পারেননি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হয়েছে তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোরগতিতে চলেছে এই মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। একমাসে এই মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুতগতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচার কার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘দেশজুড়ে যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এটি একটি কূটচাল। একদফার চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। দেশের জনগণ বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েশী রায় ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলাটি দিয়েছিল। জরুরি সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা করা হলেও কোনো মামলায় তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোন আইনগত ভিত্তি-উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীলনকশা কার্যকর করার জন্য চটজলদি জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পূরণের রায় বের করা হয়েছে।
তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জুবাইদা রহমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি না দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই মামলাটি অব্যাহত রেখেছে। জোবায়দা রহমান দেশের একজন মেধাবী চিকিৎসক, তার প্রয়াত পিতা ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান। তিনি শুধু জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ায় সম্পূর্ণ চক্রান্তমূলক, অন্যায় ও বেআইনিভাবে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি তার ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখিত ৩৫ লাখ টাকার ঘোষণা করা সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে নিয়ন্ত্রিত আদালত সরকারের ফরমায়েশী রায় দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বহুল আলোচিত হত্যা মামলা আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ৯৯ বার পেছানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৭৩ বার পেছানো হয়েছে। এরকম বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা হিমাগারে ফেলে রেখে দেশনায়ক তারেক রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম ১ মাস ২০ দিনে শেষ করা ও আদেশ দেওয়ার মানে হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নির্মূল করা। প্রধানমন্ত্রী হিংসার প্রয়োগে দ্বিধা করেননি।’
মির্জা ফখরুল অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা বাতিলের দাবি জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।