ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে, জানালেন আইনমন্ত্রী
ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইনটির নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’।
আজ সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনের কোন কোন ধারায় কী কী পরিবর্তন হয়েছে তা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আনিসুল হক। এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পূর্ণ বাতিল করা হবে না। এটিকে সংশোধন করা হবে। প্রস্তাবিত আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে সাজা কমানোর পাশাপাশি জামিন অযোগ্য কয়েকটি ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি রয়েছে। এতে বলা আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বার বার সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই ধারায় কি কি পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে, দণ্ডিত ব্যক্তি জরিমানা না দিলে আদালত তাকে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার জন্য দণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
প্রস্তাবিত আইনে এই ধারায় কি কি পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘এই ধারায় সাজা কমিয়ে সাত বছর করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ বা সাজা বাড়ানো ছিল। প্রস্তাবিত আইনে প্রত্যেকটি ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে এই ব্যক্তির এই কাজ হবে একটি অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আর এই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে সাজা আরও বেশি হবে। এ ধারাটি ছিল জামিন অযোগ্য। এখন এটিকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন এই অপরাধে সাজা হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এই ধারায় কি কি পরিবর্তন হচ্ছে তা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। এটি কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ধারায় হ্যাকিংয়ের জন্য অনধিক ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।