স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার পর মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন, দেখতে গিয়ে মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। একই স্কুলের আরও এক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের দুই শিক্ষক ওই ছাত্রীদের ধূমপানের ভিডিও রেকর্ড করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর জেরে ওই ছাত্রীদের একজন আত্মহত্যা ও আরেকজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে, সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত শিক্ষকরা।
এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে আত্মহত্যা করা ওই ছাত্রীর মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় সেখানে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গেলে তাকে মারধর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
নিহত জিনিয়া খাতুন কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে। সে সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার স্কুলে যায় ওই দুই শিক্ষার্থী। পরে, স্কুলে পাঁচ সহপাঠীকে নিয়ে ধূমপান করে তারা। বিষয়টি ওই দুই শিক্ষক দেখে ফেলেন এবং তা ভিডিও করে রাখেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ডেকে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে অভিমানে সন্ধ্যার দিকে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে জিনিয়া। একই সময়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আরেক ছাত্রী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে, আত্মহত্যার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে জিনিয়ার বাড়ির সামনে লাশ নিয়ে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এ সময় সেখানে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ গেলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাকে মারধর করে। পরে, স্থানীয় সুলতানপুর কবরস্থানে জিনিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘জিনিয়ার মৃত্যুর খবর জানার পরও প্রধান শিক্ষক দেখতে আসেনি। তিনি ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব ঘটনায় গ্রামবাসী তাকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে মারধর করে।’
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলাম। একজনের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পারি। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাড়িতে গেলে গ্রামবাসী আমার ওপর চড়াও হয়।’
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু বলেন, ‘ছাত্রীদের ধূমপানের দৃশ্য দেখার পর তাদের ডেকে শুধু ব্যাগগুলো রেখে দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, তাদের অভিভাবকরা এলেই ব্যাগ ফেরত দেওয়া হবে। ধূমপানের দৃশ্য কেউ ভিডিও করেনি। যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য না।’ অভিযুক্ত অপর শিক্ষক ওয়ালিউর রহমানের ভাষ্যও একই।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জিনিয়ার মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন করার সময় গ্রামবাসী একটু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জিনিয়া আত্মহত্যার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’