হিলটন নামে কবর দেওয়া সেই মরদেহটি মাহে আলমের
মোংলার চিলা গ্রামে হিলটন নাথ নাম করে কবর দেওয়া মরদেহটি মূলত ব্যবসায়ী মাহে আলমের। সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি মালিবাগ থেকে গত ১ আগস্ট প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে দাকোপ থানার হস্তান্তর করা হিলটন নাথের মরদেহকে চিলা গ্রামে কবর দেওয়া হয়। কবর দেওয়া হিলটন নাথের মরদেহটিকে মোংলার সুমন রানা তার বাবা মাহে আলমের দাবি করে ২৮ এপ্রিল দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে দাকোপ থানার মামলায় আদালতের নির্দেশে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ মেলে—হিলটন নাথ নাম করে কবর দেওয়া মরদেহটি হিলটনের নয়, মরদেহটি সুমন রানার বাবা ব্যবসায়ী মাহে আলমের।
ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে সিআইডির ডেপুটি চিফ ডিএনএ এনালিস্ট স্বাক্ষরিত রিপোর্টে (স্মারক নং : ২৩-০১৭৭৫/১, তারিখ : ০১-০৮-২০২৩ ) জানা যায়, মোংলার চিলা গ্রামে কবর দেওয়া হিলটনের মরদেহ প্রকৃত পক্ষে মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলমের। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ‘গ’ অঞ্চল খুলনার নির্দেশে গত ৯ মে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবরেটরি হিলটন নাথের মা বিথীকা নাথ ও মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার রক্ত নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে।
দুই মাস বিশ দিন পরে ১ আগস্ট প্রকাশিত ডিএনএ টেস্টের ফলাফলে সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম টুটুল বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ় ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃতদেহ বিথীকা নাথের জৈবিক সন্তান নয়।’ নাজমুল আলম টুটুল আরও বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, অজ্ঞাত মৃতদেহ সুমন রানার জৈবিক পিতা।’
উল্ল্যেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজলে অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া একটি মৃতদেহ পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল বিকেলে খুলনার দাকোপ থানা পুলিশ সুন্দরবনে নিখোঁজ জেলে হিলটন নাথের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। অন্যদিকে, ১০ এপ্রিল মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলম নিখোঁজ হন। ১৪ এপ্রিল সকালে মাহে আলমের ছোট ছেলে সুমন রানা মোংলা থানায় পিতার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি (নং-৬৬০) করেন।
পরবর্তীতে হিলটন নাথ হিসেবে ১৪ এপ্রিল হস্তান্তর করা মরদেহের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে একই সেটিকে সুমন রানা তার বাবা মাহে আলমের মরদেহ বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে সুমন রানা ২৮ এপ্রিল দাকোপ থানায় একটি জিডি (নং-১০৯৮) করেন।
এ ছাড়া হিলটন নাথের মা বিথীকা নাথ দাকোপ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে খুন করে লাশ গুম করার অপরাধে (ধারা ৩০২/২০১ পেনাল কোড ১৮৬০) একটি মামলা দায়ের করেন। দাকোপ থানা মামলা নং-১৬। অন্যদিকে, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত দেখে সুমন রানা মামলা দায়ের করতে চাইলে মোংলা থানা প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২ বাগেরহাটের আদেশের প্রেক্ষিতে মোংলা থানা মামলা গ্রহণ করে। মোংলা থানার মামলা নং-১৬।
ডিএনএ টেস্টের ফলপ্রকাশের পর ব্যবসায়ী মাহে আলমের ছোট ছেলে সুমন রানা বলেন, ‘যেহেতু চিলায় তিন মাস আঠাশ দিন আগে কবর দেওয়া মরদেহটি হিলটনের নয়, সেটি আমার বাবা মাহে আলমের এটা এখন প্রমাণিত। প্রথমত আদালত ও প্রশাসনের মাধ্যমে মরদেহ তুলে দ্রুত ইসলামী রীতি অনুযায়ী তা দাফন করতে চাই। পাশাপাশি আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ গুম করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি।’
এ প্রসঙ্গে সুন্দরবনে নিখোঁজ হিলটন নাথের ভাই সাগর নাথ বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট এখনো হাতে পাই নেই। রিপোর্টের ফলাফলে যদি কবর হওয়া মরদেহটি ব্যবসায়ী মাহে আলমের হয় তাহলে আমাদের ভাই হিলটন নাথকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক প্রশাসনের কাছে সেই দাবি করছি।’
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল ও মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আদালত ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাহে আলমের ছেলে সুমন রানাকে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। হিলটন নাথের মা বিথীকা নাথ ভুল তথ্য দেওয়ায় মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হবে। আর মাহে আলমকে পরিকল্পিতভাবে খুন ও মরদেহ গুম করার অভিযোগ থাকলে মাহে আলমের পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক মামলা করতে হবে।’