দৃষ্টিনন্দন সেই পাহাড়ি মহাসড়কের বুকজুড়ে ক্ষতচিহ্ন, জায়গায় জায়গায় মৃত্যুফাঁদ
পাহাড়ি এলাকায় তৈরি হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন মহাসড়কটি। সবুজ ছাওয়া পাহাড়ের কোল ঘেষে, কোথাও ক্ষেতের ওপর দিয়ে চলে গেছে এটি। দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটারের এই বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়কের বুকে এখন শুধুই ক্ষতচিহ্ন। ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটির কোথাও কোথাও হয়েছে বিধ্বস্ত। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বয়ে বেড়াচ্ছে ছোটবড় ক্ষতচিহ্ন। নির্মাণের আট মাস না পেরোতেই বহু স্থান এখন ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত সংস্কার না হলে রয়েছে দুর্ঘটনা ও তা থেকে প্রাণহানির শঙ্কা বলে মনে করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়কটি যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়। দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার সড়কটি বন্যার সময় তলিয়ে যাওয়া স্থানগুলো উঁচুকরণ, ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিষ্কাশন অবকাঠামোসহ সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের সত্যপীরের মাজার গেইট এলাকায়, হোটেল নাইট হেভেন এলাকায়, মৃত্তিকা অফিসের সামনের মোড়ে, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়, লালমোহন বাহাদুর এলাকায়, মানুরটেক এলাকায় সড়কটির বেশি ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের বিশাল অংশ ধসে গেছে। ভেঙে গেছে ড্রেন, রেলিং, প্রতিরক্ষা দেয়ালও। পাহাড় ধসে পড়েছে সড়কটির বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড ঢালু থেকে হলুদিয়া ঢালু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই। মহাসড়কের সবখানেই যেন শুধু ক্ষতচিহ্ন।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন ও আব্দুর রশিদ বলেন, সড়কটি তাড়াহুড়া করে নির্মাণের কারণে প্রথম বন্যায় সড়কটির বেশির ভাগ স্থানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় সড়কের অংশ ধসে পড়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে দূর্ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকিও। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রাখায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে সড়কের। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৃষ্টিতে সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে না পারায় পরিপূর্ণ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারমধ্যে বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়ক এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রুমা-থানচি উপজেলা সড়কের ক্ষতির পরিমাণ জানা নেই।