ছাত্রলীগের আরও ১৭ নেতাকর্মী সাময়িক বহিষ্কার
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় পাবনায় ছাত্রলীগের আরও ১৭ জন নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ। এ নিয়ে জেলায় ২৮ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করল জেলা ছাত্রলীগ।
আজ রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১১ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়।
আজ সাময়িক বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা হলেন ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সংগঠনিক সম্পাদক নাজিবুল ইসলাম নিয়ন, চাটমোহরের পার্শ্বডাঙ্গ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক লিটন খান, উপক্রিড়ক বিষয়ক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ভাঙ্গুরা উপজেলার খান মরিচ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী রাকিবুল ইসলাম, ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয় মালিথা, চাটমোহর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী প্রান্ত হোসেন, ঈশ্বরদী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী মাহমুদুল হাসান শোয়েব, ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাবিবুল্লাহ রহমান হাসিবুল, ফরিদপুর উপজেলার বিএল বাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী তরিকুল ইসলাম জীবন, বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী হৃদয় রানা ও সবুজ সরদার, বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী সুরুজ সরদার ও নাজমুল ইসলাম, সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসাইন আকাশ, সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিমেল বিশ্বাস কাজল।
বহিষ্কার হওয়া ফরিদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিবুল ইসলাম নিয়ন বলেন, ‘আমি সাঈদীকে নিয়ে কোনো ধরনের পোস্ট করি নাই। আমার প্রতিপক্ষ সুপার এডিটিং করে জেলা ছাত্রলীগের কাছে ছবিটি পাঠিয়েছে। আমি সাঈদীকে নিয়ে পোস্ট করা তো দূরের কথা আমার উপজেলা ছাত্রলীগের যারা পোস্ট করেছিল তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। গত ১০ তারিখ থেকে বাবা অসুস্থ থাকায় তাঁকে নিয়ে ভাঙ্গুড়ার একটি হাসপাতালে ছিলাম। শনিবার বাবাকে নিয়ে বাড়ি এসেছি।’
নাজিবুল ইসলাম নিয়ন আরও বলেন, ‘আমি যদি দোষ করতাম তাহলে আমি মাথা পেতে নিতাম। আমি নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করে পদত্যাগ করতাম। আমি এসব পোস্টের বিষয়ে মোটেও অবগত নই। আসলে আমি রাজনৈতিক যড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এমন কাজ করা হয়েছে। বিষয়টি সঠিক তদন্তের আগে বহিষ্কার করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।’
নাজিবুল ইসলাম নিয়ন বিষয়টি সঠিক তদন্ত করার আহ্বান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি। সেই সঙ্গে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও চান তিনি।
পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। একাত্তরে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী শোক জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে। যেটা সম্পুর্ণ নিয়মবহির্ভূত কাজ। বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া ছাত্রলীগের কর্মীদের একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে শোক জানানো খুবই দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পরামর্শে তাঁদের প্রথমে ১১ জন এবং পরে ১৭ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। এরপর সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।