র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু : উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, এই প্রতিবেদনে স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। আমরা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। এরপর পরবর্তী আদেশ দেব।
আজ রোববার (২০ আগস্ট) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ ও রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের অনুলিপি চান। তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘এ প্রতিবেদনে স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। আমরা এখনও খুলে দেখিনি। বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। সেজন্য সময় প্রয়োজন। এখন এ প্রতিবেদনের অনুলিপি দেওয়া যাবে না। পরে প্রতিবেদনের অনুলিপি দেওয়া হবে। এরপর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ৩০২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন। গত ১৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
গত ১৩ আগস্ট নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এটা সেনসেটিভ ম্যাটার। বার বার সময় দেওয়া হবে না। দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে।
আদালতে তদন্ত শেষ করতে কমিটির পক্ষে দুই মাস সময় আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ৫ এপ্রিল নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কমিটিতে জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।
তদন্তকালীন জেসমিনকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
গত ২৮ মার্চ র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর র্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।