শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করতে নোটিশ
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের এক শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। ওই শিক্ষকের নাম রনি প্রতাপ পাল। তিনি উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ওই শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বিয়ের জন্য গত ২৬ জুলাই লিখিত নোটিশ দেন। এ ঘটনায় এলাকায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘৬/১১/২০১৬ তারিখ আপনি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। এরপর অবগত হলাম, আপনি অবিবাহিত রয়েছেন। আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিয়ে করার জন্য। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, যোগদানের কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনি বিয়ে করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং, বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল গত ৩০ জুলাই গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেন।
নোটিশ পাওয়ার দুদিন পর শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন ‘আমার অভিভাবকরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গোত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া হিন্দুধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা আমাকে বিয়ে করাবেন বলে জানিয়েছেন। জবাব দেওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক তাঁকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিতে শুরু করেন। পরে তিনি বিষয়টি তাঁর অন্য সহকর্মী এবং অন্যদের জানান।
রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনও কারও কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।’
বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, রনি প্রতাপ একজন ভালো শিক্ষক তাতে সন্দেহ নেই। তাঁকে নিয়ে কেউ কখনও কোনো প্রশ্ন তোলেননি।
নোটিশের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, রনি প্রতাপের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অবিবাহিত শিক্ষক থাকলে নানা অসুবিধা হতে পারে। নানা অনৈতিক কিছু ঘটতেও পারে। এ জন্য তাঁকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা জানান, ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। এই নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।