সাঈদী ইস্যুতে সারা দেশে প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রলীগনেতাকর্মী বহিষ্কার
জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ছিলেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তার মৃত্যুর পর সমবেদনা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিতে দেখা যায় বিভিন্ন ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। এ তালিকায় মহানগর থেকে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মী রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্ব-স্ব ইউনিটে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে, এখন পর্যন্ত কতজন রয়েছে এ তালিকায় তা কেন্দ্রও হিসেব মেলাতে পারছে না। অনুমান করা যাচ্ছে শুরু থেকে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) পর্যন্ত তিন শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছেন এ তালিকায়।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে বলে নেতারাই জানিয়েছেন। তারা বলছেন, অসাম্প্রতিক চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনের পদধারী নেতাদের ক্ষেত্রে কেন এমন ঘটনা ঘটলো? এটি অনভিপ্রেত এবং বহিষ্কৃতরা সুযোগসন্ধানী বলে ছাত্রলীগের নেতারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও সংগঠনে তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর দায় স্থানীয় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতারা এড়াতে পারেন কি—না, সেই প্রশ্নও করছেন অনেকেই। কেউ আবার মনে করছেন এটি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সাংগঠনিক দুর্বলতা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ গতকাল বলেন, ‘সাঈদীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করায় অনেক নেতাকর্মীকে অব্যাহতি ও বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনও আমাদের হাতে সব খবর পৌঁছায়নি। এখনও কিছু কিছু জায়গায় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। দপ্তর সেলে সব ডেটাবেইস করে রাখা হবে। সব ডেটা পৌঁছালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
কারাবন্দি সাঈদী ১৪ আগস্ট রাতে হাসপাতালে মারা যান। এতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য পোস্ট করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় তিন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগে অব্যাহতি ও বহিষ্কার শুরু হয়। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি আছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সাতকানিয়ায় ২১ জন, ফেনীতে ২০ জন। ভোলাতে ১১ জন, নওগাঁয় ১৪ জন, বরিশালের উজিরপুরে পাঁচজন, যশোর জেলা ছাত্রলীগের এক জন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সাতকানিয়ায় আরও ২১ জন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের তিনজন, জামালপুরে ১৯ জন, নরসিংদীতে ছয়জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭ জন, রংপুরে ১৪ জন, সিলেটে ১২ জন, সুনামগঞ্জে ১৫ জন, লালমনিরহাটে ১২ জন, কক্সবাজারের পূর্ব বড় ভেওলায় তিনজন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একজন ও কাশিয়ানীতে ছয়জন, সাতক্ষীরায় তিনজন, পিরোজপুরের নাজিরপুরে দুইজন, পাবনায় সাতজন, ময়মনসিংহের নান্দাইলে তিনজন, বরিশালে চারজন, পটুয়াখালীতে তিনজন, ভোলার দৌলতখানে চারজন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জনকে ছাত্রলীগের পদ থেকে এখন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, নেত্রকোনার কলমাকান্দায় একজনকে শোকজ করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাফাই গাওয়ার ন্যূনতম সুযোগ আমাদের সংগঠনে নেই। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছি। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বৃহত্তরভাবে একটি শুদ্ধি অভিযান চালাবে।’