নির্বাচনের আগে ৯টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন, প্রথমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকারের মেয়াদে সড়ক, সেতু, রেলপথ ও বিমান চলাচলসহ মোট ৯টি মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রকল্পটি হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি প্রকল্পগুলো হলো- মেট্রোরেল প্রকল্প (বাকি অংশ), পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল), খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির প্রথম ধাপের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ৩ ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ এবং বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত অংশের ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার পুরাতন মাঠে সুধী সমাবেশ করা হবে।
মেট্রোরেল
২০ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ।
কাদের বলেন, ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন এবং ওইদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন ৫ নর্দান রোডের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে সাভারে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ হতে নগরবাসীরা উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে পারবেন মাত্র ৩৮ মিনিটে।
কর্ণফুলী টানেল
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর। এর মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে এর অপরপ্রান্ত আনোয়ারায় সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ২২ অক্টোবর নবনির্মিত সড়ক ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪০টি সেতু উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হবে ১২টি ওভারপাস। এর সঙ্গে উদ্বোধন তালিকায় রয়েছে ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি)। এগুলো সড়ক ভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করা হবে।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে
বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে যাচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানীর বুকে এই ১২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ লেনের এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে নতুন শহর পূর্বাচলের সঙ্গে যুক্ত হবে নগরীর বাকি অংশ।
একইসঙ্গে যানজট কমিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করবে।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, দৃষ্টিনন্দন এই এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি উভয় পাশে কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন করা হচ্ছে। এতে, শুধু যানজট নয়, বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত এলাকার জলাবদ্ধতারও নিরসন হবে।
রাজউক জানায়, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। যা ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদনের ৮ বছর পরে শেষ হচ্ছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ অক্টোবর আংশিক উদ্বোধন হলেও যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের শেষের দিকে।
এখন পর্যন্ত টার্মিনালের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সফট উদ্বোধনের আগে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প
ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল সংযোগের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। বাকি আছে ১২ কিলোমিটার। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে এই রেল সংযোগের উদ্বোধনের কথা থাকলেও কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও বান্দরবানের পাহাড়ি ঢলে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন পিছিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দ্রুততম সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করা হচ্ছে। এরপর খুব দ্রুত সময়েই উদ্বোধনের তারিখ জানতে পারবেন।
আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প
আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে উদ্বোধন করতে পারেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে। রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
খুলনা-মোংলা রেললাইন
আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। স্টেশনগুলোর শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ বাকি আছে।
প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হওয়ার ১৩ বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনে ভারত সফরের সময় আলাদা সময় বের করে এসবের উদ্বোধন করা হবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প
মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৯৬ শতাংশ। আর ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৭৯ শতাংশ। ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৭৯ শতাংশ। এই অংশের উদ্বোধন করা হবে ২০২৪ সালের জুনে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বরের পরে যেদিন সময় দেবেন সেদিন উদ্বোধন হবে।