১২ বছরে চালু দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই এক্সপ্রেসওয়ে। এরপর দিন থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকার বুকে নতুন এ সড়ক মাথার উপর দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত রেললাইন ধরে যাচ্ছে এই পথ। এখন পুরোপুরি প্রস্তুত ফার্মগেট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের যাত্রাটা খুব একটা মসৃণ ছিল না কর্তৃপক্ষের জন্য। অর্থ সংস্থানে জটিলতা, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, মাঝে করোনার থাবা- গত ১২ বছরে কম ধাক্কা খায়নি প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২০১১ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে সার্বিক অগ্রগতি এখন ৬৫ শতাংশ। কাজ বাকি আছে তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত।
এই যাত্রায় বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে গাড়ি উঠতে ও নামতে পারবে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওঠা ও নামার জন্য থাকবে একটি করে র্যাম্প। কুড়িলে ওঠার পথ দুটি আর নামার একটি। বনানীতে দুটি র্যাম্প ওঠার আর দুটি নামার। মহাখালীতে নামা যাবে দুই পথে তবে ওঠা যাবে একটি পথে। আর ফার্মগেটে নামার পথ একটি তেজগাঁও কলেজের সামনে, আর ওঠার র্যাম্প তিনটি। মোট ১৬টি র্যাম্পের মধ্যে ১৩টিতে যানবাহন চলাচল করবে শুরুতে।
উদ্বোধনের পরের দিন বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দুটি র্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি হুইলার, সাইকেল ও পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। মোটরবাইক এখনই চলতে পারবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে যানবাহনের সময় লাগবে ১০ মিনিট। সাড়ে ১১ কিলোমিটার মেইনলাইন এবং ১১ কিলোমিটার র্যাম্পসহ অংশটির দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২২ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই অংশের ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খোলা হবে। বনানী ও মহাখালীর র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প অন্যতম। বিশেষ করে রাজধানীর যানজট নিরসন এবং জনগণের ভোগান্তি কমাতে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক নজরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দক্ষিণে কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বিস্তৃত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, ৩০৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৩০৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২৩০৫টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২০৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ভৌত কাজের তৃতীয় ধাপে অগ্রগতি ৫.৬৭ শতাংশ।
বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেজ হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট প্রান্তের অংশ পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ পথের দূরত্ব দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এ পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র্যাম্প রয়েছে ১৫টি। র্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার জানান, পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। বাকি কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে। মাথার ওপর দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত রেললাইন ধরে যাচ্ছে এই পথ। এখন পুরোপুরি প্রস্তুত ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার।
যদিও এই যাত্রাটা খুব একটা মসৃণ ছিল না কর্তৃপক্ষের জন্য। অর্থ সংস্থানে জটিলতা, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি, মাঝে করোনার থাবা- গত ১২ বছরে কম ধাক্কা খায়নি প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২০১১ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে সার্বিক অগ্রগতি এখন ৬৫ শতাংশ। কাজ বাকি আছে তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত।
এই যাত্রায় বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে গাড়ি উঠতে ও নামতে পারবে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওঠা ও নামার জন্য থাকবে একটি করে র্যাম্প। কুড়িলে ওঠার পথ দুটি আর নামার একটি। বনানীতে দুটি র্যাম্প ওঠার আর দুটি নামার। মহাখালীতে নামা যাবে দুই পথে তবে ওঠা যাবে একটি পথে। আর ফার্মগেটে নামার পথ একটি তেজগাঁও কলেজের সামনে, আর ওঠার র্যাম্প দুটি। মোট ১৬টি র্যাম্পের মধ্যে ১৩টিতে যানবাহন চলাচল করবে শুরুতে।
এই পথে উঠবে না তিন-চাকার আর দুই চাকার কোন যানবাহন। থাকবে না ফুটপাত। নির্ধারণ করা হয়েছে যানবাহনের টোলও। প্রাইভেটকারে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। একই টোল-হার মাইক্রোবাস, পিকআপ, হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে। তবে মাঝারি ট্রাকে ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক চলাচলে গুনতে হবে ৪০০ টাকা। এছাড়া, সবধরনের বাসে গুনতে হবে ১৬০ টাকা।
৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়া সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সাল। পিপিপি অর্থায়নে চলমান এই প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ইতালি ও চায়নার ৩টি প্রতিষ্ঠান যা আগামী ২৫ বছরে তারা তুলে নেবে। এছাড়া বাকি ২৭শতাংশ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ভিজিএফ পদ্ধতিতে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সরকার।
এই পথে উঠবে না তিন-চাকার আর দুই চাকার কোন যানবাহন। থাকবে না ফুটপাত। নির্ধারণ করা হয়েছে যানবাহনের টোলও। প্রাইভেট কারে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। একই টোল-হার মাইক্রোবাস, পিকআপ, হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে। তবে মাঝারি ট্রাকে ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক চলাচলে গুনতে হবে ৪শ টাকা। এছাড়া, সবধরনের বাসের গুনতে হবে ১৬০ টাকা।
৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়া সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সাল। পিপিপি অর্থায়নে চলমান এই প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে ইতালি ও চায়নার তিনটি প্রতিষ্ঠান যা আগামী ২৫ বছরে তারা তুলে নেবে। এছাড়া বাকি ২৭ শতাংশ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে ভিজিএফ পদ্ধতিতে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সরকার।