খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি, উদ্বিগ্ন মেডিকেল বোর্ড
প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতি হয়েছে। দেহে খনিজ অসমতা দেখা দিয়েছে৷ ক্যালসিয়াম পটাসিয়াম ও রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমেছে। হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটারের অবনতি হওয়ায় উদ্বিগ্নের কথা জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
আজ রোববার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় এসব তথ্য জানান বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার পেটে পানি বেড়েছে৷ ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঘুম হচ্ছে না। অবস্থা ভালো না৷ কয়েকদিন ধরে অবনতি হচ্ছে৷ বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
খালেদা জিয়ার ‘লিভারের সমস্যা জটিল হচ্ছে। এটার আসলে শতভাগ চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে মেডিকেল বোর্ড সদস্য বলেন, ‘বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা কর যাচ্ছেন। কিন্তু একাধিক জটিলতা থাকায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’
‘মেডিকেল বোর্ড উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে ওই চিকিৎসক আরও জানান, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) বারবার মাল্টিপল ডিজিজ সেন্টারে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রেশার ও ডায়বেটিসসহ স্বাস্থ্যের প্রায় সবকয়টি প্যারামিটারই ওঠানামা করছে।’
জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘ হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে যদি বাহিরে চিকিৎসা করানো যেত, তাহলে এমনটা হতো না।’ তিনি বলেন,ম্যাডামের লিভারে সমস্যা থাকার কারণে যেহেতু উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যে আরও নতুন কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।’
খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শ্বাশুড়ির সেবার জন্য খালেদা জিয়ার ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান ঢাকায় আসছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আছে তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা আক্তার ও স্টাফ রূপা। আর মাসুদ নামে নিরাপত্তারক্ষী গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে হাসপাতালে খাবার নিয়ে যান।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত মাসের ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
এর আগে গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার অ্যানজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন—খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।
তার আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে গত ১০ জুন হাসপাতালে যান খালেদা জিয়া। প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে ২৪ জুন সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। এর ঠিক দেড় মাস পর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ৭৯বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে গুলশানে তার বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার সাত বছরের সাজা হয়।