খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার আহ্বান জানিয়ে ৫৮২ নাগরিকের বিবৃতি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন দেশের ৫৮২ জন নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক যুক্ত বিবৃতিতে মানবিক দিক বিবেচনার কথা উল্লেখ করে এই আহ্বান জানান তারা।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে দেশের জননন্দিত এ নেত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণের মতো অবস্থানে চলে গেছেন। দেশে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো আর কিছু বাকি নেই। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভানস সেন্টারে নিয়ে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। তাই আমরা সরকারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁকে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৮ বছর। প্রবীণ বয়সেও তিনি ফরমায়েশি রায়ে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। অবশ্য সরকারের বিশেষ অনুমতিতে তিনি এখন নিজ বাসভবনে বন্দি অবস্থান করছেন। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। দীর্ঘ চার বছর তার যথাযথ কোনো চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক পরিবেশেও তিনি অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনি ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরনো আর্থ্রাইটিস এবং কভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী জটিলতায় তার শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’
বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান সাংবাদিকদের কাছে তার অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন জেলবন্দি ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ। তার মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা তাই আদালতের মাধ্যমে তাকে স্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির মতো দেশের অন্যতম বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের তিনি চেয়ারপারসন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয়, গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং এদেশের উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে কাঠামোগত নানা পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করেছেন। অর্থনীতির উদারীকরণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা বিস্তারে প্রভূত উন্নতি হয়। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি দেওয়ার যুগান্তকারী কর্মসূচি তিনি চালু করেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি এবং মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলতে নানা ধরনের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচিও তিনি চালু করেন।’
নাগরিকরা আরও বলেন, ‘যমুনা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প তার আমলে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সাফল্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। রাজনৈতিক সংঘাত, অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও নব্বই পরবর্তী সময়ে দেশে কখনও খাদ্য সংকট কিংবা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। দেশের সামাজিক সূচকগুলোও উন্নতি হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তার আমলেই নির্মিত হয়েছে। তাই আমরা আশা করি—এমন একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের সামগ্রিক অবদান এবং তার বার্ধক্যের এ কঠিন সময়ের কথা বিবেচনা করে সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করবে। তিনি যাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করলে সরকারের এ পদক্ষেপকে দেশবাসী ইতিবাচক হিসেবেই দেখবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন
অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক ডা. এ জে ড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. তাসমেরি এসএ ইসলাম, অধ্যাপক ড.আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন মিয়া, সাংবাদিক ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকী, ডা. আবদুল আজিজ, অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক, সাংবাদিক এমএ আজিজ, কবি ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক এম. আবদুল্লাহ, সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাবেক সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুর রশিদ সরকার, বিজন কান্তি সরকার, ডা. সৈয়দা তানজিন ওয়ারিশ সিমকী, মুহম্মদ জকরিয়া, সাংবাদিক মোরসালীন নোমানী, অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, প্রকৌশলী আনহ আকতার হোসেন, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. আবদুস সালাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলাম, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান প্রমুখ।