যেমন আছেন হারুনের আঘাতে আহত ছাত্রলীগনেতা নাঈম
হাসপাতালের স্পেশাল কেবিন, নম্বর ২০৪। কেবিনের সামনে দাঁড়াতেই দেখা গেল, পোশাক পরিহিত দুজন পুলিশ। সময় তখন বেলা সোয়া ১১টা। তাঁরা কাউকে খুঁজছিলেন। কেবিন থেকে জাহাঙ্গীর আলম বের হতেই পুলিশ সদস্যরা জানালেন, কিছুক্ষণ পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে দেখতে আসবেন। সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান থাকবেন। এরপর দুই পুলিশ চলে গেলে জাহাঙ্গীরের (নাঈমের ভাগিনা) সঙ্গে এই প্রতিবেদক ঢোকেন কেবিনে।
দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন নাঈম বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে কক্ষের মধ্যে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন খালা মাসুদা আক্তার। তিনি বলছিলেন, ‘নাঈম কত ভদ্র ছেলে। সবাই ওকে ভালোবাসে। কেউ কোনোদিন নাঈমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়নি।’
এ প্রতিবেদক মাসুদা আক্তারের কাছে জানতে চান, ওদিনের ঘটনা নিয়ে নাঈম কিছু বলেছে কি-না? জবাবে তিনি বলেন, ‘নাঈম প্রথমে গিয়ে ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়। এরপর বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে এডিসি হারুন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন—ছাত্রলীগ তো কী হয়েছে? ছাত্রলীগ করে কি আমি এ পর্যন্ত এসেছি?’ তারপর তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটাকে পিটিয়ে পিটিয়ে কী করলেন ওই গুণ্ডা! ঠোঁট কেটে গিয়েছিল বলে আগে ভালো খেতে পারছিল না। আজ সকাল থেকে টুকটাক খাচ্ছে। আমরা কখনোই ভাবিনি, নাঈমের সঙ্গে এসব ঘটতে পারে।’
তখন বেলা সাড়ে ১১টা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন নাঈম আড়ামোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসেন। উঠেই একা হেঁটে ওয়াশ রুমে যান। ফিরে এসে বিছানায় বসেন। একটি কাচের বোতলে থাকা জুস খেতে শুরু করেন। এরপর টুকটাক কথা বললেন সবার সঙ্গে। সে সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কেমন আছেন? জবাবে নাঈম বললেন, ‘আগের চেয়ে ভালো লাগছে। গতকাল রাতে অবস্থা একটু খারাপ ছিল। সকালে ডিম খেয়েছি। কলা খেয়েছি। ফলের রস খেয়েছি। এ ছাড়া লিকুইড জাতীয় খাবার খাচ্ছি। চারটি দাঁত নড়ছে। নাকে বেশি লেগেছে।’
হারুনকে সাময়িক বহিষ্কার ও এক পরিদর্শককে বদলির প্রতিক্রিয়ায় নাঈম বলেন, ‘হারুনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক। শুধু তাই নয়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হোক। এ ছাড়া ওই পরিদর্শককেও গ্রেপ্তার করে বহিষ্কার করা হোক। আমি দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
তখন এ প্রতিবেদক মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নাঈম বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব, মামলা করব কি-না। এ সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’
এসব কথা বলতে বলতে হঠাৎই ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত হন ২০৪ নম্বর কক্ষে। একাই আসেন তিনি। প্রথমে নাঈমের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। কিছুক্ষণ কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। এরপর রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) যান ওই কক্ষে, সঙ্গে পুলিশের একটি বড় ফোর্স। সে সময় চিকিৎসকও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
পৌনে ১২ টার দিকে কক্ষের বাইরে বের হয়ে দেখা যায়, অন্তত ১০০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে-বসে ছিলেন ২০৪ নম্বরে। ছিলেন পুলিশের সদস্যরাও। ঠিক দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে ডিমএপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক কেবিনে ঢোকেন। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এর ঠিক পাঁচ মিনিট পর কমিশনারের পক্ষ থেকে এক ঝুড়ি ফল নেওয়া হয় ওই কক্ষে।
খন্দকার গোলাম ফারুক চিকিৎসাধীন নাঈমের সঙ্গে কথা বলেন। শারীরিক খোঁজখবর নেন। পরে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগনেতাদের নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় এডিসি হারুন ও পরিদর্শক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িত বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আনোয়ার হোসেন নাঈমের চিকিৎসক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি ফ্যাকাল্টি অব সার্জারি বিভাগের ডিন। এ প্রতিবেদক তাঁর সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি দাঁতে আঘাত পেয়েছেন নাঈম। নাকের হাড় ভেঙে গেছে। আগামী চার-পাঁচদিন পর তাঁর নাকে অপারেশন করা হবে। এ ছাড়া শরীরের আরও বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। মোটামুটি এক সপ্তাহের বেশি সময় তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হবে।’