নিম্ন আদালতে জামিন পেলেন আইডিয়ালের সেই মুশতাক
ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীন এই আদেশ দেন।
এদিন আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মুশতাক। পরে বিচারক ৫০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।
শুনানির সময় মুশতাকের স্ত্রী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই শিক্ষার্থীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট কলেজছাত্রীকে প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে মুশতাককে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামি হলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভুক্তভোগীকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজখবর নেওয়ার নামে আসামি ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী এ রকম আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ ব্যবস্থা করছি বলে আসামি মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন এবং ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে নিয়ে আসেন। পরে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসামিকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বাদী দুই নম্বর আসামির (অধ্যক্ষ) কাছে প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি, বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন। বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন ভুক্তভোগীকে ঠাকুরগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছে এবং যৌন নিপীড়ন করেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে এ সংক্রান্ত অপহরণ মামলার পর আলোচিত রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির সেই ছাত্রী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় গত ১৬ জুলাই। ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই ছাত্রী জানায়, তাকে কেউ অপহরণ করেনি বা ধর্ষণ করেনি। ওই দিন আদালত থেকে নিজ জিম্মায় মুক্তি নিয়ে সে মুশতাকের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসে।
এর আগে গত ৪ জুলাই মুশতাক হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। পরে, গত ১৭ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একইসঙ্গে মুশতাকের বিয়ে করা ছাত্রীকে বয়স নির্ধারণের জন্য নিরাপদ হেফাজতে (সেফ কাস্টডি) পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এ ছাড়া বয়স নির্ধারণের পর প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।