হলের ভবন থেকে পড়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, মিলেছে সুইসাইড নোট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের বহুতল ভবনের যমুনা ব্লকের ওপর থেকে পড়ে কাজী ফিরোজ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তার একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে ভবনের কয়েক তলার ওপর থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন কাজী ফিরোজ।
এরপর রাতেই তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার পর তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
কাজী ফিরোজ ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ও চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।
মাজেদুর রহমান নামে বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী জানান, হঠাৎ বিকট শব্দ হওয়ার পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন যান। তারা গিয়ে দেখেন, ফিরোজের হাত-পা নড়ছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। পরে তারা তাকে ধরে তুলে হলগেট পর্যন্ত নিয়ে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মাহমুদ হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা একজনকে নিচে পড়ে থাকতে দেখেই অ্যাম্বুলেন্স ফোন দিলাম। পরে অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষা না করেই ঢামেকে হাসপাতালে কাজী ফিরোজকে নিয়ে যাওয়া হয়। যমুনা ব্লকের দশম তলা থেকে লাফ দিয়েছে বলে ধারণা করছি। তিনি যেখানে পড়েছিলেন সেখানে তার পাশে বই-খাতা ছিল।’
কাজী ফিরোজের এই মৃত্যুর ঘটনা ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। মৃত্যুর পর ফিরোজের কক্ষে সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
কাজী ফিরোজের সহপাঠীরা বলছেন, ফিরোজ বেশ কয়েকদিন ধরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি কয়েকদিন আগে ফেসবুকেও আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
কাজী ফিরোজ গত ৬ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, তাকে সেভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক। সবাই বাঁচুক আপন প্রাণে। আপন চাওয়াতে মানুষ বাঁচুক।’
এরপর আরেক ফেসবুক পোস্টে ফিরোজ লেখেন, ‘সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সবই সুন্দর। আপনার কাছে যা ভালো লাগে না সৃষ্টিকর্তা সেটাও সৃষ্টি করেছেন, যেমন—মানুষ। সুতরাং কাউকে তাচ্ছিল্য করা উচিত নয়। প্রভুর প্রশংসা করুন।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী ফিরোজ নামে এক ছাত্র বিজয় একাত্তর হলের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পরেই মারা গেছে। তিনি গুরুতর আহত ছিলেন।’
কাজী ফিরোজের মৃত্যু প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা যাচ্ছে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে, তা হলো একটি সুইসাইড (আত্মহত্যা) নোট। সে যখন রুম থেকে বের হয়েছে, তার মোবাইলফোন, মানিব্যাগ ও সুইসাইড নোট রুমে রেখে গেছে।’
নোটে কী লেখা আছে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার প্রয়োজন নেই। মা, তোমার কথা রাখতে পারলাম না।–এ ধরনের কিছু লেখা আছে। এছাড়া তার মরদেহ যেন পোস্টমর্টেম না করা হয়, সেটিও লেখা আছে।’
ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, ‘ফিরোজের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।’