নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে পাঁচ ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে পাঁচ ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু হয়েছে। মান্দা উপজেলায় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় দুটি বাস ও ১৫টি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার জেরে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে বাস ও তিন-চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টার মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম মতিউজ্জামান মতি বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন-চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রশাসন ও মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অটোরিকশাচালকরা নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আজ বেলা আড়াইটার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে মান্দার সাবাইহাট বাজার এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও মালিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে দুটি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় বাস দুটির চালক ও তাঁদের সহকারীকে মারধর করে। পরে বাস শ্রমিকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় রাস্তার ওপর আড়াআড়িভাবে বাস রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়।
এ বিষয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশামালিক-শ্রমিক সমিতি সাবাইহাট শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলা বাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন মান্দার চৌদ্দমাইল ও ফেরিঘাট এলাকায় অবৈধভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এ নিয়ে অটোরিকশার মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিবাদ করতে গেলে গত ২৯ আগস্ট মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন তাদের মারধর করে। আজ জুমার নামাজের পর ফেরিঘাট থেকে রাজশাহীতে যাওয়ার সময় উপজেলার সাবাইহাট বাজারের কাছে চৌদ্দমাইল এলাকায় একটি অটোরিকশার থামিয়ে চালককে মারধর করে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন। পরে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় বাসশ্রমিকরা আবারও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ১৫-১৬টি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। হামলায় অন্তত ১৫ জন অটোরিকশা শ্রমিক আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রথমে অটোরিকশা শ্রমিকরা সাবাইহাট বাজার এলাকায় দুটি বাস ভাঙচুর করে। পরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হয়ে অটোরিকশা শ্রমিকদের ওপর হামলা ও অটোরিকশা ভাঙচুর করে। বিকেল ৩টার দিকে ফেরিঘাট এলাকায় আত্রাই নদের ওপর নির্মিত সেতুর পূর্ব পাশে ও সেতুর পশ্চিম পাশে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উভয়পাশে রাস্তার ওপর আড়াআড়িভাবে বাস রেখে অবরোধ সৃষ্টি করে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন।
এদিকে, বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন সমস্যা নিরসন করতে না পারায় এবং রাস্তার ব্যারিকেট তুলে না নেওয়ায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের সতিহাট থেকে সাবাইহাট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে উভয় দিকে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ চলছে। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আহসান উজ জামান জানান, পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে ফেরিঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে।