যুক্তরাষ্টের ভিসা নীতিতে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল
এক যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতেই সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আজকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ পেয়েছে। সচিবালয়সহ সর্বত্র একই আলোচনা।’
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধোলাইখালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তিসহ একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এতো বছর আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে ইতোমধ্যে ২২ জন শহীদ হয়েছেন। গুম করা হয়েছে সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে। জেলে নেওয়া হয়েছে ৫০ লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে। উদ্দেশ্য একটিই গণতন্ত্রকামী মানুষকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা এবং একদলীয় নির্বাচন করা।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ডাক্তাররা অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছি।’
সমাবেশে প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারো সাথে আপোস করেননি। পিন্টুকে জেলের ভিতর হত্যা করা হয়েছে। আজকে যারা বন্দি আছেন তাদের মুক্ত করেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩০ বছর আগের মামলায় বিএনপির নয়জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এক নেতাকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এগুলো করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবার তারা ভোটবিহীন নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। সারা পৃথিবী বলছে বিগত দুটি নির্বাচন চুরি করেছ, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সরকার বলছে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে—তবে তা দেশের মানুষতো দূরের কথা, পাগলও বিশ্বাস করে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ লুটেরা সব খেতে খেতে নদীর বালুও খেয়ে ফেলেছে। চাঁদপুরে ছয় হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবশিষ্টও খেয়ে ফেলবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ আগেও গণতন্ত্র হত্যা করেছে। একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এবার তারা কৌশলটা পাল্টেছে। আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে অবৈধ ক্ষমতাকে জায়েজ করে নিয়েছে তারা। এ দাবি তো আমরা করিনি। এ দাবিতে ২২ জনকে পুড়িয়ে মারলেন। বিচারকদের ১০ জনের মধ্যে আটজনই এই প্রথা বাতিলের বিপক্ষে বলেছিলেন। তারপরও গায়ের জোরে করেছেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এরা পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে গণতন্ত্র মুক্তি না পেলে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আর তা নির্ভর করছে জনগণের ওপর। তাই আসুন, কালবিলম্ব না করে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে নামি এবং এ স্বৈরশাসককে বিদায় করি।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেয়। ধোলাইখাল চৌরাস্তায় এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও এর পরিধি রায় সাহেব বাজার, টিপু সুলতান রোড, এবং লক্ষ্মীবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে।
ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহস্বেচ্চাসেবক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, অর্পণা রায়, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, আব্দুস সাত্তার, যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম প্রমুখ।