খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেবে সরকার, প্রত্যাশা মির্জা ফখরুলের
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার দ্রুত মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক মহিলা সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রদানের প্রেক্ষাপটে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এই ‘মহিলা সমাবেশ’ হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, সর্বপ্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি, তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে, তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার তাকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবে।’
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে যে, দ্রুত তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাকে বিদেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রেখে, গৃহবন্দি রেখে, অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটি মাত্র কারণ যে, তারা (সরকার) জানে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি বাইরে থাকেন তাহলে জনগণের যে স্রোত তা তারা বন্ধ করতে পারবে না এবং তাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’
দেশের দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এরা একটি অত্যাচারী সরকার। এই সরকারের হাতে মানুষের নিরাপত্তা নেই, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই, শিশুদের নিরাপত্তা নেই।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ ও তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এতো বেশি অহংকারী হয়ে উঠেছেন, এতো বেশি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন যে, দেশের মানুষের অবস্থা চিন্তা করছেন না। সেই কারণে আজকে এককভাবে সমগ্র দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো বলছে যে, আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। তখন সেটা তিনি উড়িয়ে দিয়ে বলেন আবারও সেই পুরনো কথা-সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে। এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। কারণ, আপনারা ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারবে না। আমার মা-বোনেরা ভোট দিতে পারে না। গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি তারা, তাদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে নারীসহ কোনো মানুষেরই কোনো নিরাপত্তা থাকবে না, আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে হারাবো, আমাদের সার্বভৌমত্বকে হারাব, আমাদের গণতন্ত্র চিরতরে চলে যাবে, আমাদের কোনো অধিকার আর থাকবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাই আসুন আগামী দিনগুলোতে আমরা নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐক্য গড়ে তুলি, সেই ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, সংসদ বিলুপ্ত করতে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচন দিতে। সেখানেই এই রাজনৈতিক সমাধানে একমাত্র পথ।’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের নাজমুন নাহার বেবী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, ইয়াসমীন আরা হক, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, অর্পনা রায় দাশ, শাহানা আখতার শানু, নায়েবা ইউসুফ, রুমা আখতারসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে আসা নেতৃ্বৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম প্রমুখ নেতৃ্বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।